তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: রংপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছেন ৫০ হাজার নেতাকর্মী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামী ২৫ ডিসেম্বর।এদিন রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলা থেকে অন্তত পঞ্চাশ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। বাস, মাইক্রোবাস, ট্রেন ও ব্যক্তিগত পরিবহনে ঢাকার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। দলটির নেতারা জানান, ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছে বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবারে (২৪ ডিসেম্বর) রাতের মধ্যে যাত্রা করেছেন বাকিরাও বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি আসনে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের প্রত্যেকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার করে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ঢাকায় জমায়েত করার প্রস্তুতি সেরেছেন। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত হতে দু’দিন আগে থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের উদ্যোগে বাস, ট্রেন ও মাইক্রোবাসে করে কর্মী-সমর্থকরা ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে যাওয়া নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই দলবদ্ধ ভাবে যাচ্ছেন। ঢাকায় তাদের হোটেল ও মেসে থাকাসহ অন্যান্য ব্যয়ভার দলের নেতারা ব্যয় করছেন।আরও পড়ুন: দেশের পথে তারেক রহমানআবার কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে নিজস্ব পরিবহনে কিংবা পছন্দসই পরিবহনে করে প্রিয় নেতার ‘ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন’ দেখতে আগাম ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন। তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে স্মরণকালের এই মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী প্রতিদিনই শহর, বন্দর, হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জে মিছিল ও সভা করছেন। যেন তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। রংপুর মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহির আলম নয়ন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে যুবদল নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় কয়েকদিন প্রতিদিন শুভেচ্ছা মিছিল করে আসছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী ঢাকার আয়োজনে যোগ দিতে আগাম রওনা দিয়েছেন। কেউ কেউ ঢাকায় এখন অবস্থান করছেন। আমাদের প্রস্তুতি সভাগুলোতে সিদ্ধান্ত হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগের বাইরে দলবদ্ধভাবে বাস, ট্রেনসহ অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে মহানগর, থানা, ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাবেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট বড় নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী যাত্রা শুরু করেছেন। কেউ যাচ্ছেন দলীয় পরিবহনে, কেউ আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে। রংপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নুর হাসান সুমন বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে আছে, তা থেকে জনগণের মুক্তি মিলবে। এ কারণে তাকে ঘিরে শুধু দলীয় নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক রকম আনন্দ উচ্ছ্বাস কাজ করছে। আমাদের কাছে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সাধারণ ব্যবসায়ী, তরুণ-যুবকরাসহ যারা রাজনীতি করে না, তারাও আমাদের সঙ্গে ঢাকা যেতে চান, তারেক রহমানকে সামনে থেকে দেখতে চান। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জ্বীবিত করছে। এ কারণে দলবদ্ধ ছাড়াও অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে প্রিয় লিডারকে বরণ করে নিতে ঢাকায় যাবেন। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস ও মাইক্রোবাসে আমাদের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী রংপুর থেকে ঢাকায় গেছেন।    জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, কাউনিয়া, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও সদর উপজেলা বিএনপির পাশাপাশি মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর উদ্যোগে শতাধিক মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। এসব পরিবহনে নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। ঢাকাযাত্রা ও ফেরার বিষয়ে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠপর্যায়ে সমন্বয় টিমও গঠন করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো।আরও পড়ুন: তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বাগেরহাট থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন ১০ হাজার নেতাকর্মীএদিকে, রংপুর মহানগরীর কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টারের ম্যানেজার ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর থেকে ঢাকায় দিনে-রাতে অন্তত শতাধিক বাস যাতায়াত করে। বেশিরভাগ বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। একইভাবে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্রিম কোনো টিকিট নেই। রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ বলেন, আমাদের মালিক সমিতি থেকে ২৫টি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। এসব বাসে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি আমাদের লোকজন যাচ্ছর। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রংপুর থেকে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন। এখন কোথাও খালি পরিবহন পাওয়া দুষ্কর। শুধু বাস নয়, অন্যান্য পরিবহনেও একই অবস্থা। তারপরও পরিবহন মালিক হিসেবে আমরা সেই চাহিদা পূরণে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, রংপুর জেলার ছয়টি আসন থেকে পাঁচ হাজার করে নেতাকর্মীর হিসেব ধরলে ৩০ হাজার হয়। আমরা ধরে নিয়েছি, রংপুর থেকে কমপক্ষে অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ছাত্র-জনতা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাবেন। রংপুর মহানগর ও জেলাসহ বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। অনেকেই দু’দিন আগ থেকেই ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করছেন। রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু বলেন, রাজকীয় সংবর্ধনা জানাতে রাজধানী ঢাকায় সাধারণ মানুষসহ নেতাকর্মীদের ঢল নামার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা মহানগর থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মীকে ঢাকার নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে ২০টি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। এছাড়া অনেকেই ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন ইউনিট থেকে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাকসহ বিভিন্নভাবে ঢাকা যাবেন। রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রংপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, রংপুর থেকে ৫০ হাজার মানুষ ঢাকা যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) অনেকেই রাজধানীতে পৌঁছে গেছেন। বাকিরা আজ রাতের রিজার্ভ গাড়িসহ বিভিন্নভাবে ঢাকা পোঁছে যাবেন।উল্লেখ্য, আগামীকাল দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় ১৮ বছর পর স্ত্রী ও কন্যাসহ সপরিবারে দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি অবতরণ করবেন। বিমানবন্দর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনি সরাসরি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় গিয়ে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। পরে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।