সাতক্ষীরায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে বেতনা নদীর খননকৃত মাটি লুটপাটকারী চক্রের হোতাকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় বাধা দিতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতরা হলেন: ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুর রহমান ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান। ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন জানান, একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে নেহালপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বেতনা নদীর খননকৃত মাটি লুটপাট করে আসছিল। এই চক্রের সর্দার ধুলিহর সানাপাড়ার মৃত ইমান আলীর ছেলে ট্রলিচালক কেসমত আলী। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের এক ঠিকাদার নেহালপুর এলাকার ওই মাটি কিনেছেন মর্মে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অর্ণব দত্ত পুলিশকে অবহিত করেন। একইসঙ্গে মাটি যাতে কেউ লুটপাট না করে তা দেখার নির্দেশনাও দেন। তাৎক্ষণিক পুলিশ বিষয়টি ট্রলিচালকদের সর্দার কেসমত আলীসহ সবাইকে জানিয়ে দেয়। এসআই সোহরাব হোসেন আরও জানান, বুধবার ভোরে কেসমত আলীর নেতৃত্বে ৭-৮ জন নেহালপুর স্লুইস গেটের পাশে বেতনা নদী খননের স্তূপকৃত মাটি কেটে ট্রলিতে ভরে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর আসে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়। একপর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী রাজকুমার মন্ডল বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে এসে তাদের মাটি কাটতে বাধা দিলে কেসমত ও তার সহযোগীরা তার ওপর চড়াও হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ট্রলিভর্তি মাটিসহ কেসমতকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। আরও পড়ুন: এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, সাতক্ষীরা সীমান্তে বেড়েছে টহল এদিকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে কেসমতকে মারধর করা হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে তার ভাই রহমত, স্ত্রী শাহানারা ও ভাইপো বাবুরালীসহ ২০-৩০ জন ফাঁড়ির ফটক জোরপূর্বক খুলে ফেলে। তারা কেসমতকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে এএসআই মাহাবুর রহমান ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান বাধা দেন। এ সময় হামলাকারীরা ওই দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করে কেসমতকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, বিগত সময়ে কেসমতের নেতৃত্বে বেতনা নদীর খননকৃত মাটি লুটপাট করা হতো। কেসমতের পেছনে থাকা রাঘব বোয়ালরা নেপথ্যে থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে এই হামলায় মদত দিয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কেসমত আলীর দাবি, ‘পুলিশের নিষেধ অমান্য করে বুধবার সকালে আমি বেতনার মাটি কাটছিলাম এটা সত্য। কিন্তু আমাকে ধরে আনার পর আর কখনো মাটি কাটব না বলার পরও ফাঁড়ির কর্মকর্তা এসআই সোহরাব হোসেন আমাকে মারধর করেছেন।’ সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় কেসমতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।