জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় মান্নার ঋণ পুনঃতফসিল বাতিল করলো ইসলামী ব্যাংক

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আফাকু কোল্ড স্টোরেজের ৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বাতিল করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। জালিয়াতি ও ভুয়া নথিপত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এই সিদ্ধান্ত নেয়।ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে শর্তসাপেক্ষে আফাকু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্নার অনুকূলে ঋণ পুনঃতফসিলের একটি স্যাংশন পত্র ইস্যু করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে একাধিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে এবং বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়।তদন্তে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী ও পরিচালক ইসমত আরা লাইজু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক থাকলেও তাদের স্বাক্ষর জাল করে এবং ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ঋণ পুনঃতফসিলের অপচেষ্টা চালানো হয়। এসব গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্যাংশন পত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে।এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বড়গোলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. সুলতান মাহমুদ জানান, তদন্তে জাল-জালিয়াতির তথ্য প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে গত ২১ ডিসেম্বর ঋণ পুনঃতফসিলের স্যাংশন পত্র বাতিল করা হয়েছে।এদিকে রাজনীতির মাঠের তুখোড় বক্তা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল এই ঋণ খেলাপির তকমা।বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দেয়ার আবেদন জানিয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ফলে আগামী নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্নার অংশগ্রহণের আর কোনো সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি মো. মনজুর আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।আদালতে মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। রায় শেষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মান্না সাহেব ঋণ খেলাপির তালিকা থেকে মুক্তি চেয়ে রিট করেছিলেন, যা আদালত গ্রহণ করেননি। আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপি হিসেবে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’তবে এই আদেশে দমে যাননি মান্নার আইনজীবীরা। ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করব। ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এমন আইনি জটিলতা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আপিল বিভাগে তিনি কোনো স্বস্তি পান কি না, এখন সেটিই দেখার বিষয়।