দৈনিক প্রথম আলো এবং দ্যা ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় আলেমদেরকে হয়রানিমূলক গ্রেফতার ও তাদের প্রতি আইনি বৈষম্য করা হচ্ছে দাবি করে 'ইন্তিফাদা বাংলাদেশ'- গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৷ সংগঠনটির পক্ষ থেকে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।তারা জানান, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকার মুখে ‘ইনক্লুসিভিটি’ ও ‘রুল অফ ল’ বা আইনের শাসনের কথা বললেও কার্যত হাসিনা রেজিমের নাগরিক অধিকার হরণ এবং ইসলামপন্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের ফ্যাসিবাদী ধারাবাহিকতা জারি রেখেছে। সংগঠনটি উল্লেখ করে,মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী ও মাওলানা আইনুল হক কাসেমীর আটক ও পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখানোর প্রক্রিয়াটি জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মূল অঙ্গীকারের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন (Special Powers Act 1974) নামের কালাকানুনের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে আটকের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ আদেশের’ কথা বলা হয়েছে তা অত্যন্ত আতঙ্কজনক। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী কিংবা কেন তাঁকে প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে বিশেষ আদেশে আটক করতে হলো, সে বিষয়ে রাষ্ট্র কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। কেবল নির্বাহী বিভাগের আদেশে একজন নাগরিককে আটক করা সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার ও ‘ডিউ প্রসেস’-এর চরম লঙ্ঘন। আরও পড়ুন: প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় আরও ৩ জন গ্রেফতার ইন্তিফাদা বাংলাদেশ এর দাবি, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রযন্ত্রের দমনমূলক চরিত্রের কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। মাওলানা বিক্রমপুরীকে যেভাবে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাওলানা আইনুল হক কাসেমীর গ্রেফতারও বিগত রেজিমের জুলুমের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের ঘটনার জেরে তাঁকে সাদা পোশাকে এবং কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে করে রাতে তুলে নেয়া হয়েছে। অথচ তিনি ঘটনার সময় ‘প্লেইস অফ অকারেন্স’ বা ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না। ইন্তিফাদা বাংলাদেশ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো বক্তব্যকে তাঁর ( মাওলানা আইনুল হক কাসেমী) গ্রেফতারের কারণ হিসেবে দেখানো হয়, তবে আমরা সেই পোস্ট দেখে নিশ্চিত হয়েই বলছি যে তিনি কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উসকানি প্রদান করেননি, বরং কেবল ঘটনার একটা ধারা-বিবরণী দিয়েছেন মাত্র। ইন্তিফাদা বাংলাদেশ এর দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্পষ্ট উসকানি বা হামলার ডাক পাবলিক ডোমেইনে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাদের বিষয়ে রাষ্ট্রের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। অথচ আইনের খড়গ নেমে এসেছে কেবল মাদ্রাসা ছাত্র, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষের ওপর। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ধৃতদের একজনকে সুনির্দিষ্টভাবে ‘কওমি মাদ্রাসা’র ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অথচ অন্যদের শিক্ষাগত পরিচয় উহ্য রাখা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, (সরকারের) এই প্রবণতাগুলো প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান নয়। একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থাকে সন্দেহের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে; একটি ইতিমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আরও পড়ুন: ডেইলি স্টার ভবনে হামলা: আজমির হোসেন আকাশ গ্রেফতার ইন্তিফাদা বাংলাদেশ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, একইসাথে ১৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও শহীদ শরীফ উসমান হাদীর খুনিদের গ্রেফতারে দেশবাসী কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখেনি। মিডিয়া হাউজের ঘটনায় রাষ্ট্র বিদ্যুৎগতিতে অ্যাকশনে গেলেও হাদীর খুনিদের বিরুদ্ধে কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। এই দ্বিমুখী আচরণ জনমনে এই ধারণা বদ্ধমূল করছে যে কর্পোরেট মিডিয়া ও তাদের এলিট ইকোসিস্টেম এমন এক আধিপত্যবাদী বয়ান তৈরি করেছে যেখানে ইসলামপন্থীদের ওপর জুলুম বা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোকে স্বাভাবিক গণ্য করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কোনো সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা সমর্থন করি না। কিন্তু রাষ্ট্র ‘রুল অফ প্রোফাইল’ তথা চেহারা-পরিচয়-ঘরানা দেখে বিচারের ধারা চালু রেখে ‘রুল অফ ল’ বা আইনের শাসনের দাবি করতে পারে না। সবশেষ ইন্তিফাদা বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, আমরা এই রাষ্ট্রীয় জুলুমের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমরা অবিলম্বে মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী ও মাওলানা আইনুল হক কাসেমীকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান করছি।