ইসরায়েলের হাইফা শহরে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সেসময় সান্তা ক্লজের পোশাক পরা এক ফিলিস্তিনি যুবককে আটকও করে ইসরায়েলি পুলিশ। স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাতে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই। স্থানীয় সময় রোববার (২১ ডিসেম্বর) হাইফার ওয়াদি নিসনাস এলাকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান নাগরিকদের আয়োজিত বড়দিনের অনুষ্ঠানে পুলিশ জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন মোসাওয়া সেন্টার জানায়, অভিযানের সময় পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে। সান্তা ক্লজের পোশাক পরা ওই যুবক ছাড়াও একজন ডিজে ও একজন রাস্তার বিক্রেতাকে আটক করা হয়। আটক তিনজনকেই সোমবার (২২ ডিসেম্বর) মুক্তি দেওয়া হলেও, পরে আবার আদালতে হাজিরা দিতে বলা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মোসাওয়া সেন্টার আরও অভিযোগ করেছে, পুলিশ কোনো আইনি অনুমতি ছাড়াই একটি সঙ্গীত ইনস্টিটিউটে অভিযান চালিয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, তারা ‘অস্বাভাবিক শব্দ ও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে’ ওই অভিযানে যায়। তবে আটক ব্যক্তিরা মোসাওয়া সেন্টারকে জানিয়েছেন, আটকের সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের একজনের কাঁধে গুরুতর আঘাত লাগে ও মুক্তির পর তাকে চিকিৎসা নিতে হয়। তবে ইসরায়েলি পুলিশ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সান্তা ক্লজের পোশাক পরা ব্যক্তি আটকের সময় প্রতিরোধ করেন এবং এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা ও মৌখিকভাবে গালিগালাজ করেন। খ্রিস্টানবিরোধী সহিংসতা বাড়ছে এই আটক ও অভিযান এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন ইসরায়েল ও অধিকৃত ভূখণ্ডে বসবাসরত ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও নানা ধরনের বিধিনিষেধ বাড়ছে। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের চরম জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা পরিচালিত খ্রিস্টানবিরোধী ঘৃণাজনিত অপরাধ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে- অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে গির্জায় অনুপ্রবেশ, গির্জাগামীদের ওপর থুতু নিক্ষেপ, খ্রিস্টান প্রতীক ধ্বংস এবং খ্রিস্টান কবরস্থানে ভাঙচুর। এদিকে, গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। এসব হামলায় বাড়িঘর, স্কুল ও গির্জাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। গাজায় অবস্থিত তিনটি ঐতিহাসিক গির্জা সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চ, হোলি ফ্যামিলি চার্চ ও গাজা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৩ জন খ্রিস্টান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই প্রেক্ষাপটে হাইফায় বড়দিন উদযাপন অনুষ্ঠানে পুলিশের অভিযান ও সান্তা ক্লজের পোশাক পরা ফিলিস্তিনি যুবককে আটকের ঘটনা নতুন করে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই এসএএইচ