২০২৬ সালেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে চীন

সফল ২০২৫ সালের পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ দেশটির নেতৃত্বের সামনে ২০২৬ সাল হতে পারে ‘প্রলোভনের বছর’। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে কৌশলী অবস্থান নিয়ে চীন এত দিন যে সংযম দেখিয়েছে, নতুন বছরে সেই সংযম ভাঙার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ট্রাম্প জমানায় যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়লে চীন তুলনামূলকভাবে লাভবান হয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধের চাপ সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতি প্রায় পাঁচ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। শেয়ারবাজারে চীনা কোম্পানির উত্থান, আইপিও বাজারে সাফল্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি বেইজিংয়ের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ চীনের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা বেড়েছে, বিশেষ করে জার্মানির সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপজুড়ে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও প্রযুক্তিপণ্যের বিস্তার পশ্চিমা শিল্পখাতে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালে চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঢেউ শুরু হতে পারে। তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা ভূরাজনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে তাইওয়ানকে ঘিরে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুযায়ী, শি জিনপিং পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের সক্ষমতা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৬ সালে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক ‘গ্রে-জোন’ কৌশল—যেমন কাস্টমস পরিদর্শন বা আংশিক অবরোধ—নেওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। এতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে চীন বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতেও উদ্যোগী হচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষ দিকে বেইজিং ‘গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ’ চালু করে অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ু ও মহাকাশ খাতে নতুন আন্তর্জাতিক নিয়ম প্রস্তাব করে। বিরল খনিজ সম্পদের ওপর বৈশ্বিক লাইসেন্সিং ব্যবস্থার প্রস্তাবও তুলেছে চীন। তবে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আশঙ্কা, এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বেইজিং বিশ্বকে নতুনভাবে নিজেদের ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে চাইছে। বিশ্লেষকদের মতে, শি জিনপিং যদি সংযম না দেখান, তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা ‘হিউব্রিস’ চীনের জন্য ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে—যেমনটি অতীতে ‘উলফ ওয়ারিয়র’ কূটনীতি বা ‘জিরো কোভিড’ নীতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে। তবে সতর্ক পথ বেছে নিলে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনা এড়িয়ে চলার মাধ্যমে ২০২৬ সাল শেষে চীন বৈশ্বিক ক্ষমতার দৌড়ে আরও এগিয়ে থাকতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/