কর্মব্যস্ত জীবনে দুপুরের খাবার কেমন হওয়া উচিত

সানজানা রহমান যুথী কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় পান না, আবার অনেকে ফাস্টফুড বা পাউরুটি খেয়ে থাকেন। তবে দীর্ঘদিন এই ধরনের খাবার খেলে শরীরের মেটাবলিজম ধীর হতে পারে। অনেকে ডায়েট বা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য দুপুরের খাবারই এড়িয়ে যান, আবার কেউ ভুল খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করেন। সুস্থ থাকতে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত, তা জানতে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ফরাজি হাসপাতালের নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড লাইফস্টাইল স্পেশালিষ্ট বর্ণালী মোস্তফা মুনা। জাগো নিউজ: দুপুরের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের আদর্শ অনুপাত কেমন হওয়া উচিত? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: দুপুরের খাবারে শর্করা, বিশেষ করে রিফাইন্ড শর্করা কম রাখা উচিত, কারণ বেশি শর্করা খাওয়ার পর শরীরে ঝিমুনির উদ্রেগ ঘটতে পারে। মডারেট শর্করা ভিত্তিক ব্যালান্সড ম্যাক্রো প্ল্যান অনুযায়ী, কার্বোহাইড্রেট ৩৫-৪৫% (লো জিআই, হোল ফুড থেকে), প্রোটিন ২৫-৩০% এবং ফ্যাট ২৫-৩০% রাখা ভালো। এই অনুপাত রক্তে শর্করার হঠাৎ স্পাইক কমাতে সাহায্য করে, ইনসুলিন স্পাইক নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি ও এনার্জি বজায় রাখে। জাগো নিউজ: আমাদের ওজন/উচ্চতা/বয়স অনুযায়ী দুপুরে কত ক্যালোরি গ্রহণ করা উচিত? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: দুপুরের খাবার সাধারণত দৈনিক মোট ক্যালোরির ৩০-৩৫% হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজনের দৈনিক ক্যালোরি প্রয়োজন ১৮০০-২০০০ ক্যালোরি হয়, তাহলে দুপুরের খাবারে ৫৫০-৭০০ ক্যালোরি রাখা যথেষ্ট। তবে এই ক্যালোরির পরিমাণ ব্যক্তির বয়স, শারীরিক পরিশ্রম, মেটাবলিক অবস্থা এবং কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। জাগো নিউজ: প্রতিদিন দুপুরের খাবারে কোন কোন খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিত? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: একটি স্বাস্থ্যকর দুপুরের খাবারে থাকা উচিত লো জিআই কার্বোহাইড্রেট, যেমন পরিমিত পরিমাণ ভাত, তবে ফাইবার সমৃদ্ধ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রোটিন যেমন ডাল, মাছ, ডিম বা মাংস অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। খাবারে কমপক্ষে দুই ধরনের শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও থাকা উচিত, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং মেটাবলিজম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। জাগো নিউজ: ওজন কমাতে চাইলে দুপুরের মেনু কেমন হওয়া উচিত? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: ওজন কমানোর জন্য দুপুরের খাবারে শর্করার পরিমাণ কম রেখে প্রোটিন ও ফাইবার বেশি রাখা উচিত। দুপুরের খাবার শুরু করার আগে প্রথমে সবজি বা সালাদ খেতে হবে,এরপর মাছ, মাংস এবং ভাত খেতে হবে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং খাবারের পুষ্টি সর্বোচ্চভাবে শোষিত হয়। ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড ও রিফাইন্ড খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া খাবারের পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে হজম ও মেটাবলিজম ঠিক থাকে। জাগো নিউজ: ওজন বাড়াতে চাইলে দুপুরে কী ধরনের খাবার খেতে হবে? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: অনেকেই মনে করেন, বেশি ফাস্টফুড ও কোল্ড ড্রিঙ্ক খেলে ওজন দ্রুত বাড়বে। তবে এটি একদমই ভুল ধারণা। স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী শর্করা, পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং যথাযথ পরিমাণ ভালো ফ্যাট যেমন ঘি বা বাটার রাখতে হবে। হজমকে উন্নত করতে প্রোবায়োটিক হিসেবে দই বা কিমচিও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। জাগো নিউজ: দুপুরে ফাস্টফুড/ভাজাপোড়া খাওয়ার ক্ষতি কী? মাঝে মাঝে খেলে সমস্যা হবে কি? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে ইনফ্লামেশন, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে হঠাৎ এক বা দুই দিন খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি যেন নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। জাগো নিউজ: দুপুরে কার্বোহাইড্রেট কম নিলে কি শক্তি কমে যায়? বর্ণালী মোস্তফা মুনা: শর্করা খুব বেশি কমিয়ে দিলে শরীরে এনার্জি কম লাগতে পারে। যারা অতিরিক্ত শারীরিক শ্রমের কাজ করেন, তাদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, মাঝারি পরিমাণ লো-জিআই শর্করা গ্রহণ করা সবচেয়ে কার্যকর এবং শরীরের শক্তি বজায় রাখে। আরও পড়ুন: ঘুমানোর আগে ধূমপানে বাড়ছে অনিদ্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি প্রতিদিন কতটুকু ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাবেন  এসএকেওয়াই/