যিশুর জন্ম থেকে সান্তা ক্লজ: ক্রিসমাসের হাজার বছরের গল্প

ডিসেম্বর এলেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এক আলাদা উচ্ছ্বাস। আলো, সাজসজ্জা, উপহার আর মিলনমেলার এই উৎসবের নাম ক্রিসমাস। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর পালিত এই দিনটি একদি যেমন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র ধর্মীয় উৎসব, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আনন্দের দিন।খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনেই জন্মেছিলেন যিশু নাজারেথ। যাঁর জীবন ও শিক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে আছে খ্রিস্টধর্ম। তাই ক্রিসমাস মানেই গির্জায় প্রার্থনা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, উপহার দেওয়া-নেওয়া, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো আর ছোটদের অপেক্ষা— কখন আসবেন সান্তা ক্লজ! যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭০ সাল থেকেই দিনটি সরকারি ছুটির মর্যাদা পেয়েছে। ২০২৫ সালে ক্রিসমাস পড়ছে বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর। ক্রিসমাস নিয়ে বহু তথ্য অনেকেরই অজানা। কীভাবে এই উৎসবের শুরু, তার বিবর্তন ও বিভিন্ন উদযাপনের শেকড় কোথায়— চলুন জেনে আসি সেই গল্প। যেভাবে সূচনা হলো ক্রিসমাসের শীতের মাঝামাঝি সময় মানুষ উৎসব করবে— এটাই যেন প্রকৃতির নিয়ম। বছরের সবচেয়ে অন্ধকার দিন পেরিয়ে আলো ফেরার প্রত্যাশা থেকেই জন্ম নিয়েছিল শীতের উৎসব। যিশুর জন্মের বহু আগেই ইউরোপের নানা অঞ্চলে শীতকালীন অয়নান্ত ঘিরে মানুষ নতুন জীবনের আশায় আনন্দ করত। দিন ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করলেই মনে হতো, সামনে উষ্ণতা আর আলো ফিরে আসছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার নর্স জনগোষ্ঠীর কাছে এই আনন্দের নাম ছিল ‘ইউল’। ডিসেম্বরের ২১ তারিখের আশপাশে শুরু হওয়া এই উৎসবে পরিবারের সবাই মিলে বড় কাঠের গুঁড়ি জ্বালাত। সেই আগুন টানা কয়েক দিন, কখনো বারো দিন পর্যন্ত জ্বলত। আগুনের প্রতিটি স্ফুলিঙ্গকে তারা ভাবত নতুন বছরে জন্ম নেওয়া পশুর প্রতীক— সমৃদ্ধি আর জীবনের ইঙ্গিত।  ইউরোপের অন্য প্রান্তেও ডিসেম্বরের শেষ ভাগ ছিল উৎসবের উপযুক্ত সময়। শীতের আগে গবাদি পশু জবাই করা হতো, ফলে হাতে থাকত তাজা মাংস। সারা বছর ধরে তৈরি করা মদ আর পানীয়ও তখন খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠত। খাবার, পানীয় আর অবসরের এই মিলন থেকেই তৈরি হতো আনন্দমুখর শীতের দিনগুলো। জার্মান অঞ্চলে এই সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল ভয়ের বিশ্বাসও। সেখানে মানুষ পূজা করত পৌত্তলিক দেবতা ওডিনকে। ধারণা ছিল, তিনি রাতের আঁধারে আকাশে উড়ে বেড়িয়ে মানুষের ভাগ্য ঠিক করেন। এই বিশ্বাসে অনেকে রাত নামলেই ঘরের ভেতরেই থাকত। সময় বদলেছে। বিশ্বাস বদলেছে। কিন্তু শীতের অন্ধকারে আলো খোঁজার যে মানবিক আকুলতা, তা বদলায়নি। সেই প্রাচীন উৎসবই সময়ের স্রোতে রূপ বদলে আজকের ক্রিসমাস। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে এটি এখন মিলন, ভালোবাসা আর ভাগ করে নেওয়ার প্রতীক— এক দিনের উৎসব নয়, বরং মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধনের দীর্ঘ, উষ্ণ গল্প। ইউল থেকে স্যাটারনালিয়া: ক্রিসমাসের আগের গল্প আজকের ক্রিসমাস হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। শীতের অয়নান্ত ঘিরে প্রাচীন ইউরোপ আর রোমান সভ্যতায় যে উৎসবের ঢেউ উঠত, তার স্রোতেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এই আনন্দের দিন। আলো ফেরার আশায় মানুষ তখন শীতের অন্ধকারকে ভাঙতে চেয়েছিল উৎসব দিয়ে। আরও পড়ুন: বড়দিনের শুভেচ্ছা জানালেন মেহজাবীন রোমে এই সময়ের সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল স্যাটারনালিয়া। কৃষির দেবতা স্যাটার্নের সম্মানে শীতের অয়নান্তের আগে শুরু হয়ে প্রায় এক মাস ধরে চলত এই আয়োজন। চারপাশে তখন ছিল খাওয়া-দাওয়া, গান আর উচ্ছ্বাস। সমাজের কঠোর নিয়ম ভেঙে পড়ত। দাসেরা পেত সাময়িক মুক্তি, তাদের সঙ্গে আচরণ করা হতো স্বাধীন মানুষের মতো। দোকান, ব্যবসা আর স্কুল বন্ধ থাকত, যেন সবাই উৎসবে মেতে উঠতে পারে।  একই সময়ে রোমে পালিত হতো জুভেনালিয়া — শিশুদের জন্য আলাদা আনন্দের দিন। আর সমাজের অভিজাতদের কাছে ২৫ ডিসেম্বর ছিল বিশেষ। তারা এই দিনে পালন করত অজেয় সূর্যের দেবতা মিথ্রার জন্মদিন। বিশ্বাস ছিল, শিলাখণ্ড থেকে জন্ম নেওয়া এই শিশুদেবতাই আলো আর শক্তির প্রতীক। এসব উৎসব, বিশ্বাস আর আনন্দ মিলেই সময়ের সঙ্গে এসে মিশেছে ক্রিসমাসে। ধর্ম বদলেছে, নাম বদলেছে, কিন্তু শীতের অন্ধকারে আলো খোঁজার মানুষের চিরন্তন উৎসব রয়ে গেছে একই। যিশুর জন্মদিন কি সত্যিই ২৫ ডিসেম্বর? খ্রিস্টধর্মের শুরুর দিনে যিশুর জন্ম নয়, ইস্টারই ছিল সবচেয়ে বড় উৎসব। তাঁর জন্মদিন আলাদা করে উদ্‌যাপনের চল আসে অনেক পরে। ইতিহাসবিদদের মতে, যিশুর জন্ম উপলক্ষে প্রথম ক্রিসমাস পালনের লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টাব্দ ৩৩৬ সালে, যদিও ধারণা করা হয় দ্বিতীয় শতক থেকেই এই ভাবনার শুরু।  চতুর্থ শতকে গির্জা যিশুর জন্মদিনকে আনুষ্ঠানিক উৎসব হিসেবে স্থির করে। কিন্তু বাইবেলে তাঁর জন্ম তারিখের কোনো উল্লেখ নেই। বরং কিছু সূত্রে ইঙ্গিত মেলে, তাঁর জন্ম বসন্তকালে হতে পারে। কারণ শীতের রাতে মাঠে রাখালদের ভেড়া চরানোর ঘটনা প্রশ্ন তোলে। তবু পোপ জুলিয়াস প্রথম ২৫ ডিসেম্বরকে জন্মদিন হিসেবে নির্ধারণ করেন। ইতিহাসবিদদের অনেকের মতে, জনপ্রিয় শীতকালীন উৎসব স্যাটারনালিয়ার সঙ্গে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসকে মিলিয়ে নিতেই এই তারিখ বেছে নেওয়া হয়। শুরুতে এর নাম ছিল ‘নাটিভিটি উৎসব’। পরে তা মিসর হয়ে ইংল্যান্ডসহ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শীতের অয়নান্তের সময় ক্রিসমাস রাখায় উৎসবটি দ্রুত সাধারণ মানুষের জীবনে ঢুকে পড়ে। তবে এর বিনিময়ে গির্জা উৎসবের ধরন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। মধ্যযুগে ক্রিসমাস হয়ে ওঠে প্রার্থনার পাশাপাশি উচ্ছ্বাসের দিন। মদ, গান আর হাসি-ঠাট্টায় উৎসব অনেক সময় রূপ নিত এক ধরনের কার্নিভালে। গরিবরা ধনীদের বাড়িতে গিয়ে খাবার আর পানীয় চাইত, আর ধনীরা এই দিনেই সমাজের প্রতি তাদের দায় শোধ করত আনন্দ ভাগ করে। আরও পড়ুন: বড়দিনের জনপ্রিয় চরিত্র ‘সান্তাক্লজ’ কে ছিলেন? যে সময় ক্রিসমাস নিষিদ্ধ ছিল আজকের উজ্জ্বল ক্রিসমাস একসময় ছিল নিষিদ্ধ আনন্দ। সতেরো শতকের ধর্মীয় সংস্কারের ঢেউয়ে ইংল্যান্ডে ক্ষমতায় এসে অলিভার ক্রমওয়েল ও তাঁর পিউরিটান অনুসারীরা ১৬৪৫ সালে ক্রিসমাস বাতিল করেন। তাঁদের চোখে এই উৎসব ছিল ভোগ আর উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতীক। তবে নিষেধাজ্ঞা টেকেনি। ১৬৬০ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লস সিংহাসনে ফিরতেই ক্রিসমাসও ফিরে আসে মানুষের জীবনে।  এই কঠোরতা আরও তীব্র ছিল আমেরিকায়। ১৬২০ সালে আসা পিউরিটান পিলগ্রিমদের সমাজে ক্রিসমাস ছিল অবাঞ্ছিত। বোস্টনে ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত ক্রিসমাস পালন ছিল বেআইনি। কেউ উৎসব করলে দিতে হতো পাঁচ শিলিং জরিমানা। অথচ একই সময়ে জেমসটাউনে মানুষ নির্বিঘ্নেই দিনটি উদ্‌যাপন করত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ইংরেজ ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিসমাসও আড়ালে চলে যায়। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৮৭০ সালের ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস সরকারি ছুটির স্বীকৃতি পায়। উনিশ শতকে এসে আমেরিকানরা ক্রিসমাসকে নতুনভাবে গড়ে তোলে। শ্রেণি দ্বন্দ্ব, বেকারত্ব আর অস্থিরতার সময়ে হইচইয়ের উৎসব বদলে তারা খুঁজে নেয় শান্ত, পরিবারঘেঁষা এক দিনের রূপ। ১৮২৮ সালে নিউইয়র্কে ক্রিসমাস দাঙ্গার পর প্রথম পুলিশ বাহিনী গঠনের ঘটনাই ইঙ্গিত দেয়— উৎসবকে বদলাতে হবে। নিষিদ্ধ হওয়া সেই ক্রিসমাসই সময়ের সঙ্গে বদলে আজ হয়ে উঠেছে পরিবার, ভালোবাসা আর মিলনের প্রতীক। কলমে-গল্পে গড়া ক্রিসমাস ১৮১৯ সালে ওয়াশিংটন আরভিং তাঁর “দ্য স্কেচবুক অব জিওফ্রি ক্রেয়ন”- এ ক্রিসমাসকে দেখালেন এক শান্ত, মানবিক উৎসব হিসেবে— ইংল্যান্ডের গ্রাম্য প্রাসাদে ধনী-গরিব সবাই এক টেবিলে বসে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে। ইতিহাসের সঙ্গে এই ছবি পুরোপুরি মেলে না, অনেকটাই ছিল লেখকের কল্পনা। তবু এই কল্পনাই আমেরিকান সমাজে নতুন ভাবনার বীজ বুনে দেয়— ক্রিসমাস মানে হইচই নয়, বরং হৃদয়ের কাছাকাছি আসা।  এই ভাবনাকে আরও গভীর করে দেন চার্লস ডিকেন্স। “আ ক্রিসমাস ক্যারল”–এ দান, সহমর্মিতা আর দায়িত্ববোধের যে বার্তা তিনি ছড়িয়ে দেন, তা ইংল্যান্ড ও আমেরিকা - দু’জায়গাতেই মানুষের মন বদলে দেয়। একই সময়ে সমাজে পরিবার আর শিশুদের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ক্রিসমাস হয়ে ওঠে ভালোবাসা, আদর আর উপহারের দিন। এরপর আমেরিকানরা নিজেদের মতো করে উৎসবটিকে নতুন ছাঁচে ঢালতে শুরু করে। অভিবাসী সংস্কৃতি, চার্চের রীতি আর সামাজিক প্রয়োজন মিলিয়ে জন্ম নেয় ক্রিসমাস ট্রি, শুভেচ্ছা কার্ড আর উপহারের ঐতিহ্য। মনে হতো যেন শতাব্দীপ্রাচীন রীতি পালন করা হচ্ছে, অথচ বাস্তবে তৈরি হচ্ছিল এক নতুন উৎসব। ইতিহাসের বহু বাঁক পেরিয়ে সেই গড়া ক্রিসমাসই আজ মানুষের ঘরে ঘরে আপন হয়ে আছে। সান্তা ক্লজের জন্মগল্প: কিংবন্তির মানুষ থেকে উৎসবের হাসি লাল জামা, সাদা দাড়ি আর কাঁধে উপহারের বস্তা— আজকের সান্তা ক্লজ যেন কেবল উৎসবের প্রতীক। কিন্তু এই হাসিখুশি মুখের পেছনে লুকিয়ে আছে এক মানবিক ইতিহাস। সময়ের গভীরে তাকালে দেখা যায়, সান্তার শিকড় গাঁথা এক নিঃস্বার্থ মানুষের জীবনে। প্রায় সাড়ে সতেরোশ বছর আগে, আনুমানিক খ্রিস্টাব্দ ২৮০ সালে তুরস্কে জন্ম নেন খ্রিস্টান সাধু সেন্ট নিকোলাস। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব সম্পদ দান করে দিয়ে তিনি জীবন কাটান দরিদ্র, অসুস্থ আর অসহায় মানুষের পাশে। এই দয়ার গল্পই তাঁকে করে তোলে শিশু ও নাবিকদের রক্ষাকর্তা— আর ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর কিংবন্তি।  আঠারো শতকের শেষ দিকে নিউইয়র্কে ডাচ পরিবারগুলোর হাত ধরে সেই গল্প পাড়ি জমায় আমেরিকায়। তারা ‘সিন্ট নিকোলাস’- এর স্মরণে উৎসব করত; নাম বদলে বদলে ‘সিন্টার ক্লাস’ হয়ে ওঠে পরিচিত ‘সান্তা ক্লজ’ হিসেবে। ১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা “এ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস” সান্তাকে দেয় আধুনিক কল্পনার রং— হরিণ টানা স্লেজ, শিশুদের জন্য খেলনা, আর এক উজ্জ্বল হাসি। আর ১৮৮১ সালে শিল্পী থমাস নাস্ট সেই কল্পনাকে আঁকেন স্থায়ী রূপে - লাল জামা, সাদা দাড়ির ‘ওল্ড সেন্ট নিক’। সেখান থেকেই সান্তা ক্লজ হয়ে ওঠেন আজকের চিরচেনা, উৎসবের আনন্দ। ঝলমলে উৎসবের আড়ালে ক্রিসমাসের কিছু চমকপ্রদ গল্প ক্রিসমাস মানে শুধু আলো আর উপহার নয়, এই উৎসবের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বিস্ময়ের ইতিহাস। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রেই বিক্রি হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি আসল ক্রিসমাস গাছ— যার পেছনে আছে প্রায় ১৫ হাজার খামার। একটি গাছ বড় হয়ে ঘরে ওঠার উপযোগী হতে সময় লাগে চার থেকে পনেরো বছর।  ক্রিসমাসের স্বাদও ইতিহাসময়। আমেরিকায় প্রথম এগনগ পান করা হয় ১৬০৭ সালে, ক্যাপ্টেন জন স্মিথের জেমসটাউন বসতিতে। ঘরের কোণে থাকা লাল-সবুজ পয়েনসেটিয়া ফুলের নামকরণও একজন মানুষের নামে - জোয়েল আর. পয়েনসেট, যিনি ১৮২৮ সালে মেক্সিকো থেকে গাছটি আমেরিকায় আনেন। উৎসবের চেনা চরিত্রগুলোর জন্মও আধুনিককালে। ১৮৯০-এর দশক থেকে সালভেশন আর্মি রাস্তায় সান্তা সেজে অনুদান সংগ্রহ করছে। লালনাকওয়ালা হরিণ রুডলফের জন্ম ১৯৩৯ সালে, এক দোকানের প্রচারের জন্য রবার্ট এল. মের কলমে।  আর নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারের বিশাল ক্রিসমাস ট্রি? তার শুরু ১৯৩১ সালে, নির্মাণশ্রমিকদের হাতে - নির্মাণের মাঝেই আনন্দের আলো জ্বালিয়ে।  ক্রিসমাস শেষ পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট তারিখের বন্দী নয়, কোনো একটি বিশ্বাসের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। এটি আসলে মানুষের বহু শতকের স্মৃতি, আশা আর অভ্যাসের যোগফল। শীতের দীর্ঘ অন্ধকারে আলো খোঁজার যে আকুলতা একদিন আগুন জ্বালাতে শিখিয়েছিল মানুষকে, সেটাই ধীরে ধীরে বদলে গেছে প্রার্থনা, গল্প, গান আর উপহারের ভাষায়। ধর্ম এসেছে, রাষ্ট্র এসেছে, নিষেধাজ্ঞা এসেছে, আবার সেসব হারিয়েও গেছে - কিন্তু মানুষ তার আনন্দ ছাড়েনি, একে অন্যের পাশে থাকার অভ্যাস ছাড়েনি। আজকের ক্রিসমাসে তাই একসঙ্গে ধরা দেয় ইতিহাস আর কল্পনা, বিশ্বাস আর মানবিকতা। গির্জার ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে মিশে যায় শিশুদের হাসি, সান্তার গল্পের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সহমর্মিতা আর ভাগ করে নেওয়ার নীরব শিক্ষা। আলোয় সাজানো গাছ, খোলা দরজা, এক টেবিলে বসে খাওয়ার মুহূর্ত - সব মিলিয়ে ক্রিসমাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সভ্যতার যত পরিবর্তনই হোক, মানুষের সবচেয়ে গভীর উৎসবটা আজও একে অন্যের কাছে আসার আনন্দেই লেখা থাকে।