বন্যায় ভেসে যাওয়া গ্রাম যেভাবে হলো আধুনিক মিকাত ‘জুহফা’

হজ বা ওমরাহ পালনের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমদের মক্কায় প্রবেশের আগে নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যাকে বলা হয় ‘মিকাত’। রসুলুল্লাহ (সা.) নির্ধারিত পাঁচটি মিকাতে ইহরাম বাঁধা হয়।মক্কার পবিত্র কাবা ঘরের পানে ছুটে চলা মুমিনদের আধ্যাত্মিক যাত্রার শুরুটা হয় ইহরামের শুভ্র কাপড় পরার মধ্য দিয়ে। মদিনা থেকে মক্কার পথে, লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী রাবিগ শহরের কাছেই অবস্থিত ঐতিহাসিক মিকাত ‘জুহফা’। মক্কা মোকাররমা থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১৮৩ থেকে ১৮৭ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ইসলামের ইতিহাসে এই স্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রসুলুল্লাহ (সা.) শাম বা সিরিয়া, মিশর, মরক্কো এবং সেই পথ দিয়ে আগতদের জন্য জুহফাকে মিকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক সময় এটি একটি জনবহুল গ্রাম ছিল। কিন্তু ইতিহাসের এক পর্যায়ে বিশাল বন্যায় এলাকাটি ধুয়েমুছে যায় বলে এর নামকরণ হয় ‘জুহফা’ যার অর্থ যা বন্যায় ভেসে গেছে। আরও পড়ুন: হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোরআনে যা বলা হয়েছে ​দীর্ঘদিন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও, বর্তমানে সৌদি সরকার হাজিদের সুবিধার্থে এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিশাল মসজিদ ও ইহরাম বাঁধার কমপ্লেক্স তৈরি করেছে। রাবিগ শহরের ঠিক উত্তর পাশে অবস্থিত এই স্থানটি এখন সারা বছরই ওমরাহ যাত্রীদের পদচারণায় মুখর থাকে। বিশেষ করে যারা সড়কপথে উত্তর দিক থেকে মক্কায় প্রবেশ করেন, তাদের জন্য এটিই আত্মশুদ্ধির প্রথম স্টেশন। বর্তমানে এখানে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যেখানে একসঙ্গে হাজারো মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। রয়েছে অজু ও গোসলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক ব্যবস্থা। ইউরোপ, আমেরিকা বা আফ্রিকা থেকে যারা জেদ্দা হয়ে মক্কায় আসেন, আকাশপথে তাদের বিমান অনেক সময় এই মিকাত বা এর সমান্তরাল আকাশসীমা অতিক্রম করে। তখন আকাশেই তাদের ইহরাম বাঁধতে হয়। তবে যারা সড়কপথে আসেন, তারা এখানে যাত্রাবিরতি করে, গোসল সেরে, ইহরামের কাপড় পরে এখান থেকেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে মক্কার দিকে রওনা হন। আরও পড়ুন: ‘সখরাতুন ত্বয়িলা’ যেখানে নবীজি (সা.) বিশ্রাম নিয়েছিলেন ধু-ধু মরুভূমির বুকে জুহফা যেন এক প্রশান্তির ছায়া। এখান থেকেই শুরু হয় আল্লাহর মেহমানদের মূল আনুষ্ঠানিকতা। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় জুহফা থেকে মক্কার পথ।