তিনদিনের ছুটিতে পর্যটক-দর্শণার্থীতে লোকারণ্য কক্সবাজার

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক সমাগম ঘটেছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার এসে পৌঁছান ভ্রমণপ্রেমীরা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নানা বয়সের পর্যটক-দর্শণার্থীতে লোকারণ্য হয়ে ওঠে সৈকতের বেলাভূমি ও পর্যটনস্পটগুলো। টানা এ ছুটিতে দরিয়ানগরে চার-পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতি ও কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বান্দরবানের চাকরিজীবী শামীম ছিদ্দিকী বলেন, পেশাগত কারণে পাহাড়ে থাকতে হয়। পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। বড়দিনের ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিন ছুটি পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের কক্সবাজার সাগরের সান্নিধ্য দিতে আসা। সমুদ্র আমাদের জন্য পুরোনো, কিন্তু বাচ্চাদের অনেক আনন্দ দিচ্ছে। শীতের হিমেল পরিবেশ অন্যরকম ভালোলাগা দিচ্ছে। মিরসরাই হতে বেড়াতে আসা আকিবুল ইসলাম বলেন, কুয়াশা মাখা সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। সৈকততীর, হোটেল-মোটেল অলিগলি, রাস্তা সবখানেই লোকারণ্য। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইজিবাইক, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। চোখের নাগালে দুরত্ব হলেও ভাড়া চায় দেড়শ, দুইশ টাকা। এসব ছোট ছোট হয়রানি ভ্রমণপ্রেমীদের বিরক্ত করে। কলাতলীর ব্যবসায়ী মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ছুটির দিন হলে লোকসমাগম ঘটে বেশি। ফলে, বাইবাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়ক সবখানেই তীব্র যানজটে নাকাল পর্যটন জোন। যানবাহনের সঙ্গে রয়েছে লোকজটও। বড় বাসগুলো টার্মিনাল ও আদর্শগ্রাম পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন জোন এবং শহরে ঢুকায় যান ও জনজট লেগে আছে। তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নূর সোমেল বলেন, বড়দিন উপলক্ষে অতীতের মতো হোটেলের লবিতে যিশু খ্রিষ্টের প্রতিকৃতি ও ক্রিসমাস ট্রিতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। উৎসবের আমেজ তৈরিতে বড়দিন উপলক্ষে হোটেলের রুফটফের চাঁদনী লাউঞ্জে গালা ডিনারের আয়োজন রয়েছে। কক্সবাজার টুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, পর্যটন জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের জন্য প্রায় আগাম বুকিং হয়ে আছে। মৌসুমে এ সময়টুকুতে কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গাজীপুরের পর্যটক আহসান কবির জানান, লোকসমাগম বেশি দেখে সবকিছুর দাম বেশি- অটোরিক্সা, হোটেলের খাবারসহ সবকিছুতেই বাড়তি দাম বলে মনে হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের যথাযথ তদারকি দরকার। কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে সপ্তাহিক ও বড়দিন মিলে টানা তিনদিনের ছুটি পড়েছে। এরপরই থার্টিফার্স্ট নাইট। এ সময়টাতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসছেন, সব মিলিয়ে ভালো সময় যাচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়। গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় কাজ করা সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন পর্যটকরা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেকে বিপৎসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনতে কাজ করার পাশাপাশি নিরাপদ থাকতে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। এদিকে লোকারণ্য পর্যটক-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে টুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, আমাদের প্রথম ও মুখ্য কাজ হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে নিয়মিত তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে টুরিস্ট পুলিশ। পর্যটক হয়রানি দমনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করলে টুরিস্ট পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান বলেন, বিপুল লোকসমাগম মাথায় নিয়ে সতর্কভাবে দায়িত্বপালন করছে পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও পর্যটক বেশেও পুলিশের সদস্যরা ঘুরছেন। টহলে রয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাবও। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, পর্যটন জোনের সুগন্ধা-লাবনী-কলাতলী পয়েন্টে লোক সমাগম একটু বেশি। তবে সব পয়েন্টে পর্যটক উপস্থিতি চিন্তা করে তথ্যকেন্দ্র সচল রয়েছে। পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। সায়ীদ আলমগীর/এমএন/জেআইএম