নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের যুদ্ধবিমান ওড়ানোর এআই ভিডিও, কিসের ইঙ্গিত?

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বি-২ বোমারু বিমান ওড়াচ্ছেন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি এমন একটি ভিডিও পোস্ট করেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস অফিস।ইরানের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়। মাত্র সাত সেকেন্ডের প্রতীকী ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সানগ্লাস পরে আছেন এবং তারা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন।  ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের বিজয়ের ছয় মাস।’ পরমাণু ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও তেহরানের পরোক্ষ আলোচনার মধ্যে চলতি বছরের ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন। জবাবে ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ অভিযানে ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ইসরাইলের প্ররোচনায় ২২ জুন ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে হামলার মধ্যদিয়ে এই যুদ্ধে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে পরদিন ২৩ জুন ইরান কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এতে উভয় পক্ষ হামলা বন্ধ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি।  আরও পড়ুন: ইরানে ফের হামলা চালাবে ইসরাইল? ইসরাইল এই যুদ্ধে বিজয় দাবি করে বলেছে, ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর ব্যাপক আক্রমণ করা জরুরি ছিল যাতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে। তবে বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই যুদ্ধে ইরান জিতেছে আর ইসরাইল-আমেরিকা জোট হেরেছে। তাদের যুক্তি, ইরানে হামলার দুটি টার্গেট ছিল- ইরানের পরমাণু অস্ত্র পরিকল্পনা বন্ধ করা এবং শাসক গোষ্ঠীর (রেজিম) পরিবর্তন। সেই দুটি টার্গেটের কোনোটিই পুরণ হয়নি। সেটা পুরণ না করে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ইরানের শক্ত প্রতিরোধের কারণেই এটা হয়েছে।  সম্প্রতি ইসরাইলের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।  আরও পড়ুন: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন ইসরাইল হিব্রু ভাষার ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনও অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য।  আরও পড়ুন: পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিলেন মোসাদপ্রধান ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফো জানায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি-ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরাইল। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। এদিকে কয়েকটি সূত্র এক্সিওসকে বলেছে, এ মুহূর্তে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে একটু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকেই যুদ্ধ বাঁধতে পারে। এ ধরনের মহড়াকে দুই পক্ষই হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়ে হামলা চালাতে পারে।