প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ফুটবল: ১১১ বছর আগের এক মানবিক ইতিহাস

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল ১১১ বছর আগে আজকের দিনে। ১৯১৪ সালের ক্রিসমাস উপলক্ষে ইউরোপের পশ্চিম ফ্রন্টে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা জার্মান ও ব্রিটিশ সেনারা সাময়িকভাবে অস্ত্র নামিয়ে রেখে অংশ নিয়েছিলেন এক অনানুষ্ঠানিক ফুটবল ম্যাচে। ইতিহাসে এই ঘটনা পরিচিত হয়ে আছে ‘ক্রিসমাস ট্রুস’ বা বড়দিনের যুদ্ধবিরতি নামে।১৯১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পশ্চিম ফ্রন্টে অবস্থানরত জার্মান সেনারা ছাউনি থেকে বড়দিনের গান গাইতে শুরু করেন। এর জবাবে ব্রিটিশ সেনারাও গান ধরেন। ধীরে ধীরে দুই পক্ষের মধ্যে এক অঘোষিত যুদ্ধবিরতি গড়ে ওঠে। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সকালে উভয় পক্ষের সৈন্যরা ছাউনি ছেড়ে বেরিয়ে এসে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ মিলিত হন। বিবিসি ও হিস্ট্রি ডটকম–এর তথ্যমতে, ওই সময় সৈন্যরা একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করেন, বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং খাবার ও ছোটখাটো উপহার আদান–প্রদান করেন। এরপরই বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ফুটবল ম্যাচ। কোথাও চামড়ার বল, কোথাও টিনের ক্যান বা কাপড় গিঁট দিয়ে তৈরি করা বল ব্যবহার করা হয়। ম্যাচগুলোর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, রেফারি বা সময়সীমা ছিল না। আরও পড়ুন: মাঠে বসে ছেলের জয় দেখলেন জিদান ব্রিটিশ ও জার্মান সৈন্যদের চিঠি ও ডায়েরিতে এসব ম্যাচের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ সেনা এরনি উইলিয়ামসের স্মৃতিচারণায় বলা হয়, একটি ম্যাচে জার্মান সেনারা ৩–২ গোলে জয় পায়। তবে ইতিহাসবিদরা একমত যে, এসব ম্যাচের ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক এবং প্রতীকী। দ্য গার্ডিয়ান–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইতিহাসবিদ ম্যালকম ব্রাউন জানান, এই ফুটবল ম্যাচ ছিল যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সাধারণ সৈন্যদের এক নীরব মানবিক প্রতিবাদ। রাষ্ট্রীয় শত্রুতা থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্যের আকাঙ্ক্ষা যে প্রবল— এই ঘটনাই তার প্রমাণ। তবে যুদ্ধবিরতিটি খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বড়দিনের পরদিনই আবার শুরু হয় গোলাগুলি। পরবর্তী বছরগুলোতে সামরিক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে। আরও পড়ুন: এনরিকের সঙ্গে ‘আজীবন চুক্তি’র কথা ভাবছে পিএসজি তবুও ১৯১৪ সালের সেই ফুটবল ম্যাচ ইতিহাসে আজও স্মরণীয়। ১১১ বছর পরেও এটিকে স্মরণ করা হয় শান্তি, মানবতা ও খেলাধুলার ঐক্যবদ্ধ শক্তির এক প্রতীক হিসেবে।