ভোলার চরফ্যাশনের তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় শুরু হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণ পিয়াসুরা। পাশাপাশি বিদেশিরা আসছেন এখানে। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের পাশাপাশি সমুদ্রের ঢেউ, অতিথি পাখি, ম্যানগ্রোভ বন পর্যটকদের আকর্ষণ করেন। তবে পর্যটকরা বলছেন, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি আরও সৌন্দর্যবর্ধন করলে দেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠবে তারুয়া সমুদ্র সৈকত। প্রতিবছর লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোলার সদর উপজেলা থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশন উপজেলার বঙ্গোপসাগর মোহনায় ঢালচর ইউনিয়নের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে তারুয়া সমুদ্র সৈকত। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য, সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, ঝাউ বন, পাখিদের কলকাকলিসহ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, লাল কাঁকড়া বিচরণ এক সঙ্গে উপভোগ করা যায় তারুয়ায়। আর তাই শীতের শুরুতে একে একে নানান বয়সি পর্যটকরা ভিড় করতে শুরু করেছেন এ সৈকতে। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটক সাজ্জাত হোসেন জিতু ও মুন্না হাওলাদার জানান, ৯ বন্ধু মিলে ঢাকায় থেকে তারুয়া সমুদ্র সৈকতে আসছেন দুদিনের জন্য। এখানে এসে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন তারা। ফেসবুকে তারা দেখেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তারুয়ার সমুদ্র সৈকতের নিয়ে ভিডিও। সেই ভিডিও দেখেই এখানে আসার আগ্রহ তাদের। এরপর বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে এসেছেন। তাদের দাবি এখানে এসে তারা সার্থক হয়েছেন। তাদের দাবি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসঙ্গে কোথাও দেখা যায় না একমাত্র তারুয়া সমুদ্র সৈকতের ছাড়া। আরেক পর্যটক জয় দে জানান, ভোলা থেকে তারা ৮ বন্ধু মিলে তারুয়ায় এসেছেন। এখানে এসে সৈকতের প্রাকৃতিক ও নির্মল বাতাস খুবই ভালো লাগছে। এখানে এসে আমাদের মন ভরে গেছে। প্রথমবারের মতো আমরা তারুয়ার আসলাম। ঢাকার যাত্রবাড়ি থেকে আসা পর্যটক মো. মাইনুল ইসলাম জানান, আমরা ১২ বন্ধু মিলে তিনদিনের ছুটিতে তারুয়া আসছি। তারা সবাই চাকরিজীবী। শীতের ঘুরতে যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছেন। তারুয়া সৈকতে এসে তারা প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য, পাখিদের কলকাকলি, লাল কাঁকড়া, ম্যানগ্রোভ বন ও ঝাউ বন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এখানে এসে একসঙ্গে সব দেখা যাচ্ছেন দূরে যাওয়া লাগে না। তিনি জানান, এরআগে বক্সবাজার, কুয়াকাটা ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু এত সুন্দর দৃশ্য সেখানে একসঙ্গে দেখতে পারি নেই। একমাত্র তারুয়াই এমন দৃশ্য দেখতে পেরেছি। আমাদের মনে হয় তারুয়া সৈকত বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটন এলাকা হতে পারে যদি সরকারিভাবে এখানে উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়। মনপুরা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বকি সীমান্ত হেলাল জানান, তারুয়া সৈকতে কী নেই যা অন্য কোথায় আছে সবই আছে। এখানে সারাদেশ থেকে পর্যটকরা এসে যেমন মুগ্ধ হচ্ছেন তেমনি আবার তারা আসার পরিকল্পনা করছেন। আমি প্রথমবারের মতো এসে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের ভোলার মধ্যে এত সুন্দর জায়গা অথচ আমরা আগে আসতে পারি নাই। এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। তিনি জানান, এখানে আসার জন্য চরফ্যাশন থেকে একটি মাত্র লঞ্চ ও রিজার্ভ স্পিডবোট এবং মাছ ধরার ট্রলার ছাড়াও অন্য কিছু নেই। এতে একটু সমস্যা হচ্ছে পর্যটকদের। যদি এখানে আরও কিছু লঞ্চ দেওয়া যেতো তাহলে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হতো। আর পর্যটকরা খুশি হতেন। চট্টগ্রাম থেকে আসা নীরব হোসেন জানান, প্রথমবারের মতো পরিবারের ৬ সদস্য তারুয়ায় এসেছেন। এখানে এসে তারা তাঁবু নিয়েছেন। টিনসেটের রিসোর্ট আছে কিন্তু তাঁবু টাই পছন্দ করেছেন তারা। আর কম খরচে এখানে থাকার পাশাপাশি তাজা ইলিশ, চিংড়ি, রুপচাঁদা, কোড়াল, পোয়া, পাঙাশ, কাঁকড়াসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ দিয়ে খাওয়া যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো পর্যটক এলাকায় নেই। আমরা তো অনেক পর্যটক এলাকায় ঘুরেছি কিন্তু সেখানে থাকা ও খাওয়ার খরচ অনেক ব্যয় বহুল কিন্তু তারুয়ার সেটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক রেজা চৌধুরী জানান, তিনি তারুয়ার সৌন্দর্যের কথা বন্ধুদের সঙ্গে শুনেছেন। পরে অফিস থেকে চারদিন ছুটি পেয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তারুয়ায় এসেছেন। ঢাকা সদর ঘাট থেকে ভোলার সদরের ইলিশা লঞ্চঘাটে নেমেছেন। সেখান থেকে অটোরিকশায় করে ভোলা বাসস্ট্যান্ডে এসে চরফ্যাশনের ডাইরেক্ট বাসে উঠেন। চরফ্যাশন বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি করে কছুপিয়া ঘাটে নিয়ে লঞ্চে করে ঢালচরের আনন্দ বাজারে নামেন। এরপর মোটরসাইকেল করে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তারুয়া সৈকতে এসে পৌঁছান। এখানে থাকার ও খাওয়ার খরচও অনেক কম। থাকার জন্য ডাবল রুম মাত্র ১ হাজার টাকা ও সিঙ্গেল রুম ৫০০ টাকা ও তাঁবু মাত্র ১ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, এখানে সবচেয়ে তাদের মুগ্ধ করেছেন অপরূপ বনায়ন। তবে তিনি দাবি করে এখান যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ ও সরকারিভাবে যদি পাকা রিসোর্ট ও সৈকতের আশপাশে বেঞ্চ বনানো হয় তাহলে আরও সুন্দর দেখাতে। এছাড়াও তখন প্রতিবছর লাখ পর্যটকদের সমাগম ঘটবে বলে দাবি তাদের। ভোলা জেলা প্রশাসক ডা. শামী রহমান জানান, ভোলা একটি সুন্দর জেলায়। তবে এখানে বেশ কয়েকটি পর্যটক কেন্দ্রের মধ্যে তারুয়া সমুদ্র সৈকত অপরূপ সৌন্দর্য এলাকায়। তারুয়ায় প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারাদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটকদের সমাগম হয়। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের প্রসার ঘটাতে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আশা করি তখন আরও বেশি পর্যটকরা আসবে তারুয়া সমুদ্র সৈকতে। জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএইচ/জেআইএম