কুমার নদের ওপর সেতু নির্মাণে কচ্ছপগতি, পারাপারে ডিঙি নৌকাই ভরসা চরমুগরিয়াবাসীর

মাদারীপুরে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো খোঁজ না থাকায় থমকে গেছে কুমার নদের ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ। প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই সেতুর কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। কাগজে-কলমে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে অগ্রগতি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ফলে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাতায়াতকারীরা। বাধ্য হয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পার হতে হচ্ছে তাদের।ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও জনসাধারণের যাতায়াত সুবিধার জন্য ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট মাদারীপুরের চরমুগরিয়া-নয়াচর এলাকায় কুমার নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএস রোড এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান এন্টারপ্রাইজ এই প্রকল্পের কাজ পায়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়ানো হয়। নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেতুর নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। অথচ কাগজে-কলমে দেখানো হচ্ছে ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন। এ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৫ টাকা। আরও পড়ুন: পৌরসভায় বাস করলেও ভরসা ডিঙি নৌকায়, ভোগান্তির শেষ নেই ‘নতুন মাদারীপুর’ গ্রামবাসীর স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতিতে চলায় তাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সেতুটি চালু হলে চরমুগরিয়া বন্দরের সঙ্গে শিরখাড়া, দুখখালী, বাহাদুরপুর ও পেয়ারপুর ইউনিয়নের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হতো। এতে সড়ক পথে দূরত্ব কমত প্রায় দেড় কিলোমিটার। কিন্তু কাজ থমকে থাকায় এখনো ডিঙি নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এতে একদিকে যেমন সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। স্থানীয়রা জানান, মাঝেমধ্যে নৌকায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধদের জন্য যাতায়াত হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। চরমুগরিয়া এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ এভাবে ফেলে রাখা এলজিইডির চরম অবহেলার প্রমাণ। সেতুটি চালু না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ব্যাংক, বীমা ও এনজিও কার্যালয়ে যেতে হলে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, এতে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হচ্ছে। সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী একেএম আহসান করিম বলেন, ‘চরমুগরিয়া বন্দরে যেতে এখন দেড় কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়। এতে সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে খরচও। আমরা দ্রুত এ সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।’ ইজিবাইক চালক রুবেল মিয়া বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সেতুর কাজ এগোচ্ছে না। যাত্রী কমে গেছে, আয়ও কমে যাচ্ছে। বন্দরে লোকসমাগম কমে যাওয়ায় আমাদের রোজগারে বড় প্রভাব পড়েছে।’ আরও পড়ুন: সাঁকোতেই করতি খাল পারাপার, ব্রিজের অভাবে ভোগান্তিতে ৮ গ্রামের মানুষ স্কুলছাত্রী প্রিয়া আক্তার জানায়, ‘বিদ্যালয়ে যেতে ডিঙি নৌকায় পার হতে হয়। মাঝেমধ্যে নৌকায় দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতও হয়েছে। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ হলে আমাদের কষ্ট কমবে।’ এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জনগণের ভোগান্তি কমাতে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলজিইডির মাদারীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্ত্তনীয়া জানান, চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার বর্তমানে পলাতক। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।