ভেঙে যাওয়া ঘাট, অবকাঠামোর ঘাটতি, পর্যাপ্ত জেটি না থাকা এবং নদীতে নাব্য সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে খুলনা নদীবন্দর। গত দুই বছরে পণ্য খালাস অর্ধেকে নেমেছে, রাজস্বও কমেছে। এর ফলে কাজ হারিয়েছেন ঘাট এলাকার শ্রমিকরা, থমকে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতি।খুলনার ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত খুলনা নদীবন্দরে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে লাইটারেজ জাহাজে সার, চাল, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আনা হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। তবে বন্দরের একাধিক ঘাট ভাঙন ও ধসের কারণে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এক বছরের বেশি সময় ধরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট ধসে পড়েছে। কোথাও বড় ধরনের ভাঙন, কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো। এর সঙ্গে আছে নদীতে তীব্র নাব্য সংকট, পর্যাপ্ত জেটি ও ওপেন স্পেসের অভাব এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি। খুলনা অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের কোষাধ্যক্ষ ওসমান গনি বলেন, দুই বছর আগেও বছরে শতাধিক জাহাজ এখানে পণ্য খালাস করত। এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বিকল্প পথ খুঁজছেন। আমাদের বারবার জানিয়েছি, তবুও কোনো সমাধান হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে বন্দরে ব্যবসা আরও কমে যাবে। আরও পড়ুন: সাড়ে ৪ মাসে ৪৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য খালাস মোংলা সমুদ্র বন্দরে জাহাজ কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকরা। এক সময় দুই হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন, এখন তাদের সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র পাঁচ শতাধিক। ঘাট এলাকার শ্রমিক হামিদুর রহমান বলেন, আগে প্রতিদিন কাজ থাকত। এখন সপ্তাহে দুই-তিনদিন কাজ মিললে ভাগ্য ভালো। সংসার চালানো কষ্টের হয়ে গেছে। ঘাট ভাঙার কারণে মালিকরা এখানে জাহাজ ভেড়াতে চান না। শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করছেন, ঘাট সংস্কার, নাব্য পুনরুদ্ধার এবং আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া খুলনা নদীবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। খুলনা আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মো. মফিজুর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছরে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। শুধু আশ্বাস ও পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্য আরও বড় সংকটে পড়বে। খুলনা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মোহা. মাসুদ পারভেজ জানান, ঘাট সংস্কার ও নাব্য সংকট নিরসনের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে। ১৯৬০ সালে ভৈরব নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত খুলনা নদীবন্দরটি ১৪৩ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।