বিশ্ববাজারে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে মূল্যবান ধাতুর দাম। স্বর্ণ, রুপা ও প্লাটিনামের দাম এরই মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বছরের শেষ দিকে বাজারে তারল্য কমে আসা, অনুমানভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার আরও কমার প্রত্যাশা এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবেই এই মূল্যবৃদ্ধি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫০৪ দশমিক ৭৯ ডলার। আগের সেশনে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫৩০ দশমিক ৬০ ডলার স্পর্শ করে। একই সময়ে ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৩৫ দশমিক ২০ ডলারে, যা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রুপার বাজারেও দেখা গেছে বড় উল্লম্ফন। স্পট সিলভারের দাম ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৫৬ ডলার, যা এর আগের সেশনে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭৫ দশমিক ১৪ ডলার ছুঁয়েছে। আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ইতিহাস, ছাড়াল ৪৫০০ ডলারের মাইলফলক ওয়ানডার সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক কেলভিন ওং বলেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই অনুমানভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও রুপার দামে বড় ভূমিকা রাখছে। বছরের শেষ দিকে তারল্য কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার কমার প্রত্যাশা, ডলারের দুর্বলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি-সব মিলিয়ে মূল্যবান ধাতুগুলোর দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলার এবং রুপার দাম ৯০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি, যা ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক উত্থান। এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো চাহিদা, ইটিএফে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ডি-ডলারাইজেশনের প্রবণতা। রুপার দাম বেড়েছে আরও বেশি; প্রায় ১৫৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, শিল্প খাতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ সংকট রুপার দাম বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দুটি সুদের হার কমতে পারে-এমন প্রত্যাশা থেকেই বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের মতো অ-ফলনশীল সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। কম সুদের পরিবেশে এসব সম্পদ সাধারণত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এদিকে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাজারে প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দুই মাসের জন্য ‘কোয়ারেন্টাইন’ আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে। একই সঙ্গে নাইজেরিয়ায় ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আরও পড়ুন: লাফিয়ে বেড়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণ ও রুপার দামে নতুন ইতিহাস, নেপথ্যে কী? প্লাটিনামের দাম একদিনেই ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্সে ২ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৪০ ডলার, যা আগের সেশনে যা রেকর্ড সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪২৯ দশমিক ৯৮ ডলার স্পর্শ করেছিল। প্যালাডিয়ামের দামও ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭১ দশমিক ১৪ ডলারে, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকদের মতে, অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত ক্যাটালিটিক কনভার্টারের জন্য প্ল্যাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি সরবরাহ সংকট ও শুল্ক অনিশ্চয়তার কারণে এই দুই ধাতুর দাম আরও চড়েছে। চলতি বছরে প্লাটিনামের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬৫ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের দাম বেড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি। রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক জিগার ত্রিবেদী বলেন, শিল্প খাতে শক্তিশালী চাহিদা এবং নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে বিনিয়োগকারীরা প্লাটিনামের দিকে ঝুঁকছেন। এতে দাম আরও বাড়ছে।