হিলিতে জমে উঠেছে আলুর হাট, দাম নিয়ে কৃষকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দিনাজপুরের বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলায় এখন নতুন আলু তোলার ধুম লেগেছে। মাঠজুড়ে কৃষক-কৃষাণিদের ব্যস্ততা আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসা আলুর হাটে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিলেও দাম নিয়ে চাষিদের মনে রয়েছে আনন্দ ও উৎকণ্ঠার মিশ্রণ। বিরামপুর ও হাকিমপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই দুই উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। ফলন সন্তোষজনক হলেও কৃষকদের দাবি—গত বছরের তুলনায় আলুর দাম এবার প্রায় অর্ধেক। আলু চাষি আব্দুল মালেক জানান, গত বছর ক্যারেজ আলু ২ হাজার এবং রোমানা জাতের আলু ২৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার বাজারে ক্যারেজ ৬০০ টাকা আর রোমানা ১২০০ টাকা মণ। এতে খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে পড়েছে। চাষিরা জানান, ক্যারেজ জাতের আলু বিঘা প্রতি ৬০-৬৫ মণ ফলন হলেও রোমানা জাতের ফলন হয় ৩৫-৪০ মণের মতো। তবে রোমানা জাতের দাম বেশি হওয়ায় এই জাতের আলু চাষ করে কৃষকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। চাষি জাহিদ ইকবাল রানা জানান, তার তিন বিঘা জমিতে রোমানা আলু চাষ করে বিঘা প্রতি ৩৫ মণ ফলন পেয়েছেন, যা ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করে কিছু মুনাফা হয়েছে। হাকিমপুর উপজেলার মাধবপাড়া মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকাররা আড়তদারদের মাধ্যমে আলু কিনে ট্রাকে বোঝাই করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা পাইকার রহিম উদ্দিন জানান, এখানকার আলুর মান ভালো হওয়ায় ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার খরচ বাড়ছে। আড়তদার বেদার হোসেন বলেন, গত বছর এই হাটে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার আলু কেনাবেচা হতো। এবার আলুর দাম কম হওয়ায় লেনদেন ৩০ লাখে নেমে এসেছে। সাখাওয়াত নামের এক কৃষক জানান, আমি চার বিঘা জমিতে ক্যারেজ আলু চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে ৬৫ মণ। প্রতিমণ আলু বাজারে ৬০০ টাকা করে। এতে খরচ বাদ দিয়ে অল্প কয়েক টাকা লাভ হয়েছে। আলুর ভরা মৌসুমে স্থানীয় নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। মাঠ থেকে আলু তোলা থেকে শুরু করে বস্তাবন্দি ও ট্রাকে লোড করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত শ্রমিক। শাহাবুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক জানান, বস্তা প্রতি ২৭ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে এই মৌসুমে তাদের ভালো আয় হচ্ছে, যা দিয়ে বছরের কয়েক মাসের সংসার খরচ চলে যায়। বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে গতবারের তুলনায় বাজারে এবার নতুন আলুর দাম কিছুটা কম। মো. মাহাবুর রহমান/কেএইচকে/এএসএম