প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে পৌষের আঁচল উড়িয়ে জেঁকে বসেছে মাঘের আগাম দাপট। নীল দিগন্ত আজ ধূসর কুয়াশার মায়াজালে বন্দি; যেন এক বিষণ্ন চাদরে ঢাকা পড়েছে গোটা বাংলাদেশ। হিমেল হাওয়ার ধারালো পরশে থমকে গেছে চঞ্চল জনপদ। সূর্যোদয় হলেও উত্তাপ বিলীন, মাঠ-ঘাট ছাপিয়ে কনকনে ঠান্ডা জানান দিচ্ছে–রাজত্ব এখন শীতের। প্রকৃতির এই রুদ্র শীতলতায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খাটিয়ে খাওয়া মানুষ।শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশজুড়ে শীতের এই তীব্র রূপ দেখা গেছে, যেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উত্তরের জনপদের মানুষ। দিনাজপুরে হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন। জীবিকার তাগিদে কুয়াশার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অনেকে কাজে বের হলেও, শ্রমজীবী মানুষের বড় অংশই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতায় শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।কেন এই হাড়কাঁপানো শীত?আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক সংবাদমাধ্যমকে জানান, শীতের তীব্রতা এবার সাধারণের চেয়ে কিছুটা বেশি অনুভূত হচ্ছে।তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, তবে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর এই পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রির নিচে নামে, তবে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়।’বর্তমানে রংপুর, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় সেখানে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি ঢাকা, বগুড়া ও সিলেটেও এই পার্থক্য ১৩ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। আরও পড়ুন: তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে, শীতে কাঁপছে গোপালগঞ্জ শৈত্যপ্রবাহের হাতছানিআবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। যদিও আজ রাত থেকে তাপমাত্রা সাময়িকভাবে সামান্য বাড়তে পারে, তবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে আবারও নতুন উদ্যমে হানা দেবে শীতের দাপট। তখন দুই থেকে তিন দিন তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।প্রকৃতির বৈরিতা বনাম মানুষের সংগ্রামকুয়াশার ঘনত্বের কারণে নৌপথ ও সড়কপথে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের। হিমেল হাওয়ায় জবুথবু বৃদ্ধ ও শিশুরা ভুগছেন নানা শীতজনিত রোগে। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস বলছে, সামনের কয়েকটা দিন প্রকৃতির এই শীতল লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।