ফ্ল্যাট কিনলেই মিলছে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সহায়তা

ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা প্রত্যাহারের পর অধিকাংশ ঋণের সুদহার বাড়লেও আবাসন ঋণের ক্ষেত্রে সেই চাপ খুব একটা পড়েনি। তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল সুদহার ও বিশেষ ছাড়ের কারণে আবাসন খাতে ঋণের প্রবাহ ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে চলমান রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৫-এ, যেখানে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রায় সব ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ সুদে আবাসন ঋণ দিচ্ছে। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার নিচ্ছে। মেলা উপলক্ষে এই সুদহার আরও কমিয়ে বিশেষ অফার দেওয়া হচ্ছে, যা ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে গ্রামীণ এলাকায় আবাসন ঋণের গ্রাহক ছিলেন ৪৬ হাজার ৩০ জন, যাঁদের বিপরীতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে গ্রাহকসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৪৩ জনে এবং ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩ হাজার ৭০৮ কোটি টাকায়। তবে শহর এলাকায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। জুনে শহর এলাকায় আবাসন ঋণের গ্রাহক ছিলেন ৯৩ হাজার ৮৭৮ জন এবং ঋণের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে গ্রাহক কিছুটা কমে ৯৩ হাজার ৩৮১ জনে নামলেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫ সালের জুন শেষে ভোক্তা ঋণ বছরওয়ারি ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে আবাসন ঋণেই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ২০২০ সালে আবাসন খাতে বড় ধরনের মন্দা দেখা দিলেও পরবর্তী সময়ে সুদহার কমায় খাতটি ঘুরে দাঁড়ায়। তখন থেকেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জেলা শহরগুলোয় আবাসন ঋণ বিতরণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবাসন ঋণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিবেচিত। এ ধরনের ঋণ দ্রুত খেলাপি হয় না এবং ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের নামে ফ্ল্যাট সম্পূর্ণভাবে রেজিস্ট্রি করা যায় না। ফলে গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধে সচেতন থাকেন। মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের একটি ফ্ল্যাট থাকা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে আবাসন ঋণ বড় ভূমিকা রাখছে। এ কারণে প্রায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণ সুবিধা দিচ্ছে। ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের পরিচয়, আয়ের উৎস ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে। আবাসন মেলায় দর্শনার্থীর ভিড়/ছবি; সংগৃহীত রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৫ উপলক্ষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। গৃহঋণে বুকিং দিলেই প্রসেসিং ফি সম্পূর্ণ ফ্রি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি টোটাল লোনের (মোট ঋণ) ওপরও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ডিসকাউন্ট (ছাড়)। আইডিএলসির কর্মকর্তা কাজী আরিফ জাগো নিউজকে জানান, আবাসন মেলা উপলক্ষে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ সুদে গৃহঋণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে সাধারণ সময়ে সুদহার থাকে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ঋণের অঙ্কের কোনো সীমা থাকছে না। মেলায় সিটি ব্যাংকের প্যাভিলিয়নে গৃহঋণের আবেদন করলেই প্রসেসিং ফিতে কোনো চার্জ লাগছে না। এছাড়া টোটাল লোনে থাকছে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। মেলা উপলক্ষে ব্যাংকগুলো ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ সুদহারে গৃহঋণের সুযোগ দিচ্ছে। সিটি ব্যাংকের সহকারী রিলেশন অফিসার মুসা জাগো নিউজকে বলেন, মেলা উপলক্ষে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদহারে গৃহঋণ এবং টোটাল লোনে ৭৫ হাজার টাকা ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র রিলেশন অফিসার ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদহারে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা গৃহঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রসেসিং ফি ও আরলি সেটেলমেন্ট ফি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রাখা হয়েছে। আবাসন মেলায় মিডল্যান্ড ব্যাংক ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশে এর ব্যবস্থা রেখেছে। তাছাড়া মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ফি মওকুফের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার উজ্জ্বল জাগো নিউজকে বলেন, মেলা উপলক্ষে আমাদের প্যাভিলিয়নে গৃহঋণের বুকিং দিলেই প্রসেসিং ফি সম্পূর্ণ ফ্রি রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন হিডেন চার্জ ফ্রি রাখা হয়েছে গ্রাহকদের জন্য। আর এর সুবিধা গ্রাহক লুফে নিতে পারবেন শুধুমাত্র আবাসন মেলা উপলক্ষে। এদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রদর্শনী ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৫’-এর তৃতীয় দিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সকাল থেকেই দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আয়োজকদের মতে, নতুন ড্যাপ ও ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৫ প্রকাশের পর আবাসন খাতে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। সন্ধ্যার পর প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে র‍্যাফেল ড্র, যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। ইএআর/এমএমকে/এএসএম