১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলো প্রথম পাতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাভার করেছে। অধিকাংশ পত্রিকাই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বড় মুহূর্ত হিসেবে তুলে ধরে রাজসিক সংবর্ধনা, জনসমাগম এবং ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’ বক্তব্যকে প্রধান ফোকাসে রেখেছে।দৈনিক কালের কণ্ঠ প্রথম পাতার আট কলামজুড়ে ব্যানার হেডলাইনে প্রকাশ করে— “আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান”। পত্রিকাটি তারেক রহমানের ১৭ বছর পর দেশে ফেরা, পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনার বিশালতা এবং বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে “বীরের বেশে” এবং “রাজার মতো প্রত্যাবর্তনকারী নেতা” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপদ বাংলাদেশ এবং ন্যায়পরায়ণতার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে শহীদ ওসমান হাদির প্রসঙ্গ এবং তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বানও প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দৈনিক ইনকিলাব প্রধান শিরোনামে লিখেছে— “রাজসিক গণসংবর্ধনায় দেশবাসীকে তারেক রহমানের বার্তা: ন্যায়পরায়ণতায় নিরাপদ দেশ গড়বো”। ইনকিলাবের প্রতিবেদনে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকাটি দাবি করেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিশাল গণসংবর্ধনার নজির বিরল। মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’-এর সঙ্গে তুলনা টেনে তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’ বক্তব্যকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার এবং নবী করিম (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনার প্রত্যয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। দৈনিক দেশ রূপান্তর তাদের প্রধান শিরোনামে ব্যবহার করেছে— “আমার একটি পরিকল্পনা আছে”। পত্রিকাটি তারেক রহমানের বক্তব্যের সারকথা তুলে ধরে জানায়, দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে তিনি জনগণের কাছে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার, তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা এবং ঐক্যের মাধ্যমে দেশ গড়ার আহ্বানকে কেন্দ্রীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তারেক রহমানের বক্তব্যকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইংরেজি দৈনিক নিউজ এজ শিরোনাম করেছে— “Tarique returns home to rolling reception” পত্রিকাটি তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে একটি “historic homecoming” হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনে বিমানবন্দরে দেশের মাটি স্পর্শ করার দৃশ্য, বিপুল জনসমাগম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সংক্ষিপ্ত কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য, শান্তি, নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আহ্বানকে তারেক রহমানের মূল বার্তা হিসেবে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং মায়ের প্রতি আবেগঘন বক্তব্যের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো তাদের প্রথম পাতার ৮ কলামজুড়ে ব্যানার শিরোনাম করেছে—“দেশে প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য”। পত্রিকাটি ঘটনাটিকে একটি বিরল ও স্মরণীয় দিনের দৃশ্যপট হিসেবে তুলে ধরেছে। বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটারজুড়ে মানুষের ঢল, স্বাভাবিক আধা ঘণ্টার পথ তিন ঘণ্টায় অতিক্রম, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি—সবকিছুই বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম আলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বিমানবন্দরে নেমে খালি পায়ে শিশিরভেজা ঘাসে দাঁড়িয়ে দেশের মাটি স্পর্শ করা, মাটি হাতে তুলে নেওয়ার আবেগঘন মুহূর্ত এবং জনসমাবেশে দেওয়া ‘নিরাপদ বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বানের ওপর। একই সঙ্গে অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাগত এবং নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাও প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। দৈনিক মানবজমিন তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনকে দেখেছে একটি ঐতিহাসিক ও আবেগঘন রাজনৈতিক মুহূর্ত হিসেবে। পুরো প্রথম পাতাজুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে- “বাংলার লুথার কিং”। ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে খালি পায়ে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে জন্মভূমির প্রতি তার আবেগের প্রকাশকে প্রতীকী ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দর থেকে বরণস্থল পর্যন্ত অল্প দূরত্ব পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে লাখো মানুষের ভালোবাসার কারণে। পূর্বাচলের তিনশ’ ফিট এলাকায় জনসমুদ্রের সামনে ১৭ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা জানান—যাকে মার্টিন লুথার কিংয়ের “I have a dream” ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।মানবজমিন উল্লেখ করেছে, দেশে ফিরে অসুস্থ মাকে দেখার আগেই জনতার কাছে ছুটে যাওয়া তারেক রহমানের অগ্রাধিকার স্পষ্ট করে। বক্তব্যজুড়ে গণতন্ত্র, শান্তি ও জনগণের অধিকার ফেরানোর অঙ্গীকারই ছিল মূল বার্তা। এছাড়াও দেশের প্রতিটি জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিকে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাভার করা হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠ তাদের ব্যানার হেডলাইন করেছে ‘‘বীরের বেশে রাজসিক প্রত্যাবর্তন’’। যুগান্তের প্রধান খবরের শিরোনাম- ‘‘ঐতিহাসিক গণসংবর্ধনায় তারেক রহমান- প্রিয় বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয়’’; আমাদের সময়- এর ব্যানার হেডলাইন- ‘‘জনসমুদ্রে ভালোবাসায় সিক্ত’’; ভোরের কাগজের শিরনাম- ‘‘নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার’’ আর বণিকবার্তার প্রধান খবরের শিরোনাম করা হয়েছে- ‘‘নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করলেন তারেক রহমান’’। সব মিলিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোর কাভারেজে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কেবল একটি রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়, বরং আবেগ, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে উঠে এসেছে।