মৌসুমের প্রথম ঘন কুয়াশা কেড়ে নিলো ভোলার চার শ্রমজীবীর জীবন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদপুরের হরিণাঘাট মেঘনায় এমভি এ্যাডভেঞ্চার -০৯ লঞ্চের ধাকায় ঢাকা অভিমুখি এম ভি জাকির সম্রাট-০৩ লঞ্চের ৪ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত আরও ৬ জন। এদিকে নিহতদের বাড়ি বাড়ি চলছে শোকের মাতম।পরিবারে স্বচ্ছলতার জন্য কাজের সন্ধানে ঢাকা যাওয়ার পথে প্রাণ গেল লালমোহনের দিনমজুর আবদুল গণি ও মো. সাজু খার। একই উপজেলার চর কচুয়াখালি গ্রামের পোশাক শ্রমিক রিনা বেগমও কর্মস্থলে যাওযার পথে মারা যান। আর চরফ্যাসনের হানিফ মাঝি মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে যাওয়ার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। সরেজমিনে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামে নির্মাণ শ্রমিক আবদুল গণির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। তার ১২ বছরের ময়না ঘরের সামনে বিলাপ করতে করতে মুর্ছা যায়। জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে ‘ওই লঞ্চ আমি অহন কারে বাবা ডাকমু? ওই লঞ্চ আমার বাবারে জীবিত দিয়া যায়।’ ময়নার মা গণির স্ত্রী লাইজু বিবিও আহাজারি করছেন। স্বামী হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়া লাইজুর আকুতি ‘আমি কিভাবে নাবালক পোলাপানরে বাঁচামু? কে আমার পোলাইনরে খাওন দিব?’ স্বামীর এমন মৃত্যুর জন্য লাইজু এডভেঞ্চার লঞ্চের চালককে দায়ি করে তার বিচার চেয়েছেন। আরও পড়ুন: ভোলায় ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ৩৮ বছর বয়সী আবদুল গণির ২০ বছর ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। ১২ দিন বাড়িতে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান আবদুল গণি। স্ত্রী, ৩ ছেলে মেয়ে সহ ৫ জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি একাই। আবদুল গণির বাড়ির অদূরেই নিহত সাজু খার বাড়ি। সেখানে গিয়েও দেখা যায় স্বজনদের বিলাপ। বর্গা চাষি সাজু খা মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে দেনায় পড়েন। দেনা মুক্ত হতে বাড়তি আয়ের আশায় ঢাকায় রওয়ানা করেন বৃহস্পতিবার বিকেলের লঞ্চে। হরিণাঘাটের মেঘনায় লঞ্চের সংঘর্ষে মারা যান তিনি। স্বামী হারিয়ে চার সন্তান ও দেনা নিয়ে দিশেহারা সাজু খার স্ত্রী মনোয়ারা বিবি। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কাজিরাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নিহত ২ জনের লাশের অপেক্ষায় গ্রামবাসী ও স্বজনরা। যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২ টায় চাঁদপুরের হাইমচরের হরিণাঘাট মেঘনায় ঘন কুয়াশার কবলে পরে ভোলার চরফ্যাশনের ঘোষোর হাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এম ভি জাকির সম্রাট যাত্রীবাহি লঞ্চটি। সদর ঘাট থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এমভি এডভেঞ্জার-৯ লঞ্চের ধাক্কায় ধুমরে মুচড়ে যায় জাকির সম্রাট লঞ্চের একাংশ। আরও পড়ুন: এতে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের ৪ জন যাত্রী মারা যান। নিহতরা হলেন, লালমোহনের কাজিবাদ গ্রামের রাজমিস্ত্রী আবদুল গণি (৩৮), একই গ্রামের দিনমজুর মো. সাজু (৪৫), কচুয়াখালী গ্রামের মো. মিলনের স্ত্রী মোসা. রিনা (৩৫) ও চরফ্যাসন উপজেলার আহমদপুর গ্রামের মো. হানিফ (৬০)। এ দুর্ঘটনায় আরো ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ দিকে লঞ্চ দুর্ঘটনার খবরে শুক্রবার সকাল থেকেই ভোলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।