এসএমই খাতে ঋণ কমছে, সর্বোচ্চ সীমা বাড়ালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতেও। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর বড় ব্যবসার পাশাপাশি কটেজ, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের ব্যবসা কার্যক্রমও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে এসএমই ঋণ বিতরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সিএমএসএমই খাতের সর্বোচ্চ ঋণসীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের মাত্র ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ছিল সিএমএসএমই খাতে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালের শেষে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ছিল ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ, ধারাবাহিকভাবে এ খাতে ঋণের অংশ কমছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক বৈঠকে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণে উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন কিছু ছাড়ও দিয়েছে। প্রভিশনিংয়ে ছাড়, ঋণে উৎসাহকেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সিএমএসএমই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) সংরক্ষণের হার কমানো হয়েছে। সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড ও স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে ১ শতাংশ ও ৫ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। তবে, ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএমএসএমই খাতের আওতায় থাকা সব অশ্রেণিকৃত স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ ও শিল্প উদ্যোগের ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে। এতে ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণচলতি বছরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০২৯ সালের মধ্যে এ হার বাড়িয়ে ২৭ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ঋণ ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। উপখাতভিত্তিক চিত্রনীতিমালা অনুযায়ী, মোট সিএমএসএমই ঋণের অন্তত ৪০ শতাংশ উৎপাদন উপখাতে বিতরণের লক্ষ্য থাকলেও জুন শেষে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। সেবা উপখাতে ২০ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে বিতরণ হয়েছে ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ট্রেড বা ব্যবসা উপখাতে ৪০ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে বিতরণ হয়েছে ৪৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ঋণসীমা বাড়ালো কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সিএমএসএমই খাতের সর্বোচ্চ ঋণসীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন করে কুটির উদ্যোগে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, মাইক্রো উদ্যোগে ২ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোগে ২৫ কোটি টাকা, মাঝারি উদ্যোগে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া, বিনা জামানতে নারী উদ্যোক্তাদের ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য উদ্যোক্তাদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি টিআইএন না থাকলেও বিকল্প ব্যবসায়িক সনদের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এসএমই ঋণ নেওয়া যাবে। কেন আগ্রহ কম ব্যাংকগুলোরখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এসএমই ঋণের তুলনায় করপোরেট ঋণ ব্যাংকগুলোর জন্য বেশি লাভজনক হওয়ায় তারা বড় ঋণে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বদল, পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এবং আমানত সংকটের কারণে সামগ্রিক ঋণ কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় ঋণের চাহিদাও কমেছে। ব্যাংকভিত্তিক চিত্রবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সিএমএসএমই ঋণ নেমে এসেছে ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশে। বিদেশি ব্যাংকে কমে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশে, বেসরকারি ব্যাংকে কমে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশে, ইসলামী ব্যাংকে কমে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সিএমএসএমই ঋণ বেড়ে ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ইএআর/এএমএ/এএসএম