শীতেও কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, হোটেল ভাড়া কয়েকগুণ বাড়ার অভিযোগ

কুয়াশা আর মেঘলা আকাশ উপেক্ষা করে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। টানা কয়েকদিনের ছুটিতে সৈকত এলাকায় নেমেছে পর্যটকের ঢল। চারদিকে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তবে এই আনন্দ-উল্লাসের মাঝেও রয়েছে ভোগান্তি। হোটেল ভাড়া, খাবার ও যাতায়াত খরচ বৃদ্ধির কারণে পর্যটকদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। অন্যদিকে, পর্যটনের সব খাতে ভালো বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি থাকলেও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে এতদিন শীতের অনুভূতি তেমন একটা ছিল না। কিন্তু শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘চলতি শীত মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ বছরের সর্বনিম্ন।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে যে শীতের স্পেল (শৈত্যপ্রবাহ বা হিমেল হাওয়া) চলছে, তা আগামী আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় রাত ও ভোরে শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে। শুক্রবার সকাল ১০টায় সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, বেলা গড়ালেও সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার মাঝেও সাগরতীরে মানুষের ঢল। সরকারি ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজারো ভ্রমণপিপাসু ছুটে এসেছেন সমুদ্রসৈকতে। সৈকতে কেউ সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছেন, কেউ ব্যস্ত স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি হতে। আবার কেউ কেউ পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন বালুচরে। আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে আগুন সিলেট থেকে বেড়াতে আসা রিয়াজ উদ্দিন ৫ বছরের কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে বসে খেলছিলেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার প্রিয় জায়গা, সুযোগ পেলেই চলে আসি। আজকে এসেছি পরিবার নিয়ে, সমুদ্র আমাকে মুগ্ধ করে। শীতের সময়ে এখানকার পরিবেশটা অন্যরকম ভালো লাগে।’ একই পয়েন্টে সমুদ্র উপভোগ করতে আসা নারী পর্যটক তাহমিনা বলেন, ‘সাগর সবসময় কাছে টানে। তাই সাগরের টানে ছুটে আসা। এখানে আসলেই মনটা অনেক ভালো হয়ে যায়।’ আরেক নারী সোমা আকতার বলেন, ‘ঘুরছি-ফিরছি, আনন্দ করছি। কক্সবাজারে অনেক মজা হচ্ছে। পরিবার নিয়ে এসেছি, খুব ভালো লাগছে।’ তবে আনন্দের মাঝেও আছে ভোগান্তি। অনেক পর্যটকের অভিযোগ, বাড়তি ভিড়ের কারণে হোটেল ভাড়া, খাবার ও পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক রমিস উদ্দিন বলেন, ‘হোটেলের রুম ভাড়া থেকে শুরু করে খাবার এবং যানবাহনের ভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন তো কিছুই বলা যাচ্ছে না, কারণ সিজনের দোহাই দিয়ে সবকিছুতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। আমাদের বাধ্য হয়ে সব মেনে নিতে হচ্ছে।’ আরেক পর্যটক জসিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২ হাজার টাকার হোটেল ভাড়া এখন ১০ হাজার টাকা। আরও বলে, থাকলে থাকেন, না হয় চলে যান। কোথাও রুম পাবেন না। হোটেল কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের সঙ্গে এমন কথাবার্তা বলছে।’ আরও পড়ুন: হাড়কাঁপানো শীতেও লোকে লোকারণ্য কক্সবাজার, হোটেল ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ এদিকে পর্যটকদের বাড়তি চাপে লাভবান হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের মহাব্যবস্থাপক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘গেল ৩ দিন সব রুম ভাড়া হয়েছে। আশা করি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের এমন চাপ থাকবে কক্সবাজারে। এতে আশা করা যায়, পর্যটনের সব খাতে শত কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।’ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করছেন। এই মুহূর্তে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিয়মিত তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটক হয়রানি দমনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত হেল্পলাইন ০১৩২০১৬০০০০ নম্বরে যোগাযোগ করলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। তাই সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে সার্বক্ষণিক তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু রয়েছে। সেখানে পর্যটকের অভিযোগগুলো শোনা হচ্ছে। হয়রানি কিংবা অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পর্যটকদের হয়রানি করা কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না।’