সরকারি রাস্তা কেটে পুকুর খননের অভিযোগ, দুর্ভোগে ৭ গ্রামের মানুষ

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় নিজেদের পুকুর বর্ধিত করতে সরকারি রাস্তা কেটে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ফজলুল হক ও মাসুদ রানা গংদের বিরুদ্ধে। এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রায় ৫-৭ গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল। একই ভোগান্তি স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। গ্রামবাসী প্রতিকার চেয়ে ইউএনও ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মেলেনি প্রতিকার। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, ভাঙ্গুড়া উপেজলার খানমরিচ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে কৃষি জমির আইল ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রঘুনাথপুর-জগদিশপুর কাঁচা সড়ক। মাঠের এপারের রঘুনাথপুর, পান্তাপাড়া, গজাইল, মাদারবাড়িয়া এবং ওপারের জগদিশপুর, চন্ডীপুর ও গাড়েশ্বর গ্রামের কমপক্ষে ৭-৮ হাজার লোক চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। এপারের অনেক শিক্ষার্থী জগদিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় এ সড়ক ধরেই। এছাড়া কৃষিপণ্য আনা নেওয়া ও হাটে নিতেও কৃষকরা এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু হঠাৎই সরকারি এ সড়কের রঘুনাথপুরের অংশ কেটে পুকুর খনন করায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল। স্থানীয়দের অভিযোগ, এপারের অনেক শিক্ষার্থী জগদিশপুরের বিদ্যালয়ে যায়। বিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষকদেরও একমাত্র সড়ক এটি। আবার এখানকার ৫-৭টি গ্রামের ৮-১০ হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। মাঠজুড়ে থাকা ফসলও ঘরে তুলতে এই সড়ক ব্যবহার হয়। চন্ডীপুরে হাট বসে। সেখানে ফসলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য এই সড়ক দিয়েই যেতে হয়। এসব গ্রামের মানুষ ব্রিটিশ আমল থেকে এ সড়ক ব্যবহার করছেন। রঘুনাথপুর মৌজার নকশাতেও এ সড়ক চিহ্নিত রয়েছে। অথচ হঠাৎই রাতের আঁধারে এস্কেভেটর লাগিয়ে সড়ক কেটে পুকুর খনন শুরু করেছেন স্থানীয় আমির চাঁদের ভাই ফজলুল হক, তার ছেলে মাসুদ রানা ও শাহ আলম। প্রতিকার চেয়ে দফায় দফায় ইউএনও, এসিল্যান্ড ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও মেলেনি প্রতিকার। উল্টো হুমকি ধামকির শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসী। এ নিয়ে উপেজলা চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি, দ্রুত তাদের চলাচলের সরকারি এ সড়ক দখলদারদের থেকে রক্ষা করে চলাচল উপযোগী করে দেওয়া হোক। রঘুনাথপুরের আজিজুল ফকির বলেন, প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান আনা নেওয়া করতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। এখন সরিষা হচ্ছে। এগুলোও এখান দিয়েই ঘরে তুলতে হবে। চন্ডীপুর হাটে যেতে এই রাস্তা ছাড়া কোনো রাস্তা নাই। এদিকে মাসুদ রানা, শাহ আলম ও ফজলুরা রাস্তা কেটে পুকুর খুঁড়তেছে। তাহলে কীভাবে আমরা চলবো? আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তার হোসেন বলেন, এই রাস্তার পাশেই ওদের পুকুর। এই পুকুর বাড়ানোর জন্য তারা সরকারি রাস্তা কেটে পুকুর বানাচ্ছে। প্রতিদিন শত শত লোকের যাতায়াত এই রাস্তা দিয়ে। পুকুর কাটায় আমাদের ফসলি জমি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে উল্টো অভিযোগ অভিযুক্তদের একজন মাসুদ রানার। তিনি বলেন, প্রথমে যখন পুকুরটা কাটতে গেলাম তখন সবাই সম্মতি দেয়। তখন বলা হয়, পাশ দিয়ে রাস্তা করে দিলেই হবে। পরে কাটা শুরু হলে স্থানীয় কিছু লোক মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। এটা না দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে এখন মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তারা যেখানে যেখানে অভিযোগ দিয়েছে আমরাও সেখানে গিয়েছি। লিখিতভাবে আমরাও এর সমাধান চেয়েছি। আইনে যেটা হয়, আমরা সেটা মেনে নিবো। এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পাল বলেন, সরকারি রাস্তায় পুকুর খননের সুযোগ নেই। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আলমগীর হোসাইন নাবিল/এফএ/এএসএম