‘জনগণের প্রত্যাশা পাহাড়সম’, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের মেগা প্রকল্প অনুমোদন’

প্রতিদিন পাঠকের কাছে দেশের আলোচিত ঘটনা, রাজনৈতিক উত্তাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজের পরিবর্তন এবং বিশ্বমঞ্চের নতুন বার্তা তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো। তথ্যপিপাসুদের তথ্যের চাহিদা মেটাতে সময় সংবাদ দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম পাঠকের সামনে তুলে ধরছে। এক নজরে জেনে নিন দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদন।দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কিছু খবর নিচে তুলে ধরা হলো।অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের মেগা প্রকল্প অনুমোদন— বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম এটি।এই খবরে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের একনেকের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, 'এখন থেকে মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।'তার এ বক্তব্যের পর সরকারের একাধিক উপদেষ্টাও বিভিন্ন সময় বৃহৎ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প না নেওয়ার পক্ষে কথা বলেন।যদিও এরপর বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।সর্বশেষ গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায়ও পাস হয়েছে 'ইস্টার্ন রিফাইনারির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ' প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা।নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।ভোটের আগে এত বড় অঙ্কের প্রকল্প অনুমোদন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক— দুই দিক থেকেই বিতর্কিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেল শোধনাগার বা রিফাইনারি নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রকল্প বাস্তবায়নে যে খরচ ধরা হয়েছে তা অনেক বেশি বলেও মনে করেন তারা।প্রকল্প পরিকল্পনা ও ব্যয় নিরূপণের স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর— খুনিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থানের ঘোষণা।প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদির খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা ঘেরাও করতে তারা বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এ ঘোষণা দেন।এর আগে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, দুপুর থেকে হাদির হত্যার বিচার চেয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। সমকালের প্রধান শিরোনাম— রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা আনার পরিকল্পনা।প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশে ফিরে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তৃতায় দেশ গঠনে 'আই হ্যাভ আ প্ল্যান' বাক্যটি রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।যদিও সেই পরিকল্পনা কী তা ভাষণে সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তারেক রহমান।তবে তিনি বলেন, 'এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য।'বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয় মাথায় রেখে হয়তো তারেক রহমান তার পরিকল্পনা বিস্তারিত উপস্থাপন করেননি। তবে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কাজ চলছে।বিষয়গুলো সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন কয়েকজন নেতা বলেছেন, তারেক রহমান নতুনভাবে দেশ গড়তে প্রতিটি খাত ধরে ধরে পরিকল্পনা করেছেন। এগুলো নিয়ে বেশকিছু টিম কাজও করছে।বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, তারেক রহমানের পরিকল্পনার কিছু অংশ আগেই প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে মূল বিষয়গুলো আট পরিকল্পনা হিসেবে সারসংক্ষেপ আকারে আগেভাগে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন- ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড, কৃষি কার্ড, কৃষকদের ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে তা আরও বিশদভাবে তুলে ধরা হবে।এগুলো তারেক রহমানের পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র, এমনটা বলছেন দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।তারেক রহমানের ওপর সবার দৃষ্টি: জনগণের প্রত্যাশা পাহাড়সম- যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম।যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক ও মানবাধিকারকর্মী এলিয়ানর রুজভেল্টের মতে, ‘একজন ভালো নেতা মানুষকে নেতার ওপর আস্থা রাখতে অনুপ্রাণিত করেন। কিন্তু একজন মহান নেতা মানুষকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে অনুপ্রাণিত করেন।’ সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডির এই উক্তির সূত্র ধরেই বলতে হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর জনমনে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। মানুষ তার ওপরে আস্থা রেখেছেন। অনেকেই তাকে এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে একমাত্র বিকল্প হিসাবেই দেখছেন। কারণ ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে। দলটির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ। অন্যদিকে জামায়াত বড় দল হলেও নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবেন কিনা-তা নিশ্চিত নয়। বরং কোনো কোনো ইস্যুতে দলটিকে নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় দল হিসাবে বিএনপি ও তারেক রহমানকে ঘিরেই প্রত্যাশা বেশি। তবে তিনি কতখানি সক্ষম হবেন সেই প্রত্যাশা পূরণে ইতোমধ্যেই সে আলোচনা শুরু হয়েছে।ইংরেজ কবি ও নাট্যকার শেকসপিয়ার বলেছেন, প্রত্যাশা সব মর্মবেদনার কেন্দ্রবিন্দু। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে তারেক রহমানের দেশে ফেরা মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তিনি রাজনৈতিক নেতা হিসাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, তারেক রহমানকে তার পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং মা বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শের প্রতি অটল থেকে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের মতে, অতীতের ভুল ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে পথ চলতে হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে প্ল্যানের কথা তারেক রহমান বলেছেন, সেটির প্র্যাকটিস এখনই শুরু করতে হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা বিশাল। তারা কর্তৃত্ববাদী আচরণ পরিহার চান। তারেক রহমানকে নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা আরও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বৃহস্পতিবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। বক্তব্যে তিনি দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করে রহমত চেয়েছেন। বলেছেন মহানবীর ন্যায়পরায়ণতার কথা। যে কোনো মূল্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার প্রত্যয়ের পাশাপাশি সব ধরনের উসকানির মুখে শান্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ সবাই মিলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বলেছেন। তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। দেশ ও মানুষকে নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে বলেছেন, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’। বিশ্লেষকরা তার এ বক্তব্যকে রাষ্ট্রনায়কোচিত বলে মন্তব্য করেছেন। জনগণের নেতা হয়ে উঠে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নকেই তারা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন। এক্ষেত্রে তিনি কতটা সফল হবেন সুধী মহল থেকে সর্বত্র চলছে সেই আলোচনা। মানবজমিনের প্রথম পাতার একটি খবরের শিরোনাম— তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন পরবর্তী পরিস্থিতি নজরে রাখছে ভারতএই খবরে বলা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, ভারত তা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক নেতার প্রত্যাবর্তনকে একটি বিশেষ 'ডেভেলপমেন্ট' হিসেবে দেখা হচ্ছে।ভারত মনে করে, সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের ওপর এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ও নির্বাচনী আলোচনার মধ্যে রাজবাড়ীতে অমৃত মণ্ডল এবং ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামে দুই হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছে।গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান। ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান শিরোনাম— A paper plan to curb health treatment abroad; অর্থাৎ বিদেশ গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া রোধে পরিকল্পনা কাগজে।খবরটিতে বলা হয়েছে, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, কিডনি ও হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট— এই চার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে।এই প্রবণতা রোধে চার চিকিৎসাসেবায় ঘাটতি পূরণ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চব্বিশের ডিসেম্বরে সরকার অংশীজনদের সাথে বৈঠক করে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়।যার মধ্যে রয়েছে সারাদেশে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন, ডায়ালাইসিস কেন্দ্রকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা, বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা এবং ক্যান্সারের ওষুধ ও সরঞ্জামের ওপর কর ছাড় দেওয়া।কিন্তু এক্ষেত্রে অগ্রগতি থমকে আছে।