ভারতীয় সুতার চাপে দেশের সুতাকলগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাবি করে বস্ত্রখাতের শীর্ষ সংগঠন বিটিএমএর দাবি, প্রতিবেশী দেশটি কম দামে সুতা বিক্রি করছে। পরে দাম বাড়িয়ে সুদে-আসলে তুলে নেবে লোকসানি হিসাব। তবে শিল্প মালিকদের সাফ অবস্থান, যেখানে কাঁচামালের দাম কম পড়বে, সেখান থেকেই কিনবেন তারা। এ অবস্থায় দেশীয় শিল্প রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।বিটিএমএ বলছে, দেশের সুতাকল ধ্বংসে কম দামে সুতা রফতানি করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে ভারত। পরে দাম বাড়িয়ে তুলে নেবে সুদে-আসলে। বিটিএমএর সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান বলেন, উৎপাদন খরচের ৮ থেকে ৯ শতাংশ কম দামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা সুতা রফতানি করছে। ফলে আজ আমাদের দেশের সুতাকল খারাপ অবস্থায় আছে। ভারতের রফতানি তথ্য, গেল এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে দেশটি যে পরিমাণ তুলার সুতা রফতানি করেছে এর প্রায় অর্ধেক, ৪১ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। আর ২০২৪ সালে ভারতীয় সুতা আমদানি বছর ব্যবধানে প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টনে। পোশাকশিল্প মালিকরা বলছেন, যেখান থেকে কাঁচামাল কিনলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারবেন, সেখান থেকেই কিনবেন তারা। সেইসঙ্গে সুতার উৎপাদন খরচ কমানোর পরামর্শ তাদের। আরও পড়ুন: নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে পিরোজপুরে গড়ে উঠছে না শিল্প প্রতিষ্ঠান বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বিশ্বের ক্রেতারা বিভিন্ন দেশ থেকে মূলতালিকা নেন। কম দামেরটা তারা অর্ডার করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনি কেন ভিয়েতনাম থেকে সুতা আনতে দেবেন না! আপনি কেন পাকিস্তান থেকে সুতা আনতে দেবেন না! আমার হাত-পা বেঁধে ব্যবসা করতে কেন দেবেন? বিটিএমএ বলছে, দুই দেশে উৎপাদন খরচ এক হলেও ভারত সরকার বিভিন্ন নামে প্রণোদনা দেয়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় এগিয়ে থাকছেন দেশটির উদ্যোক্তাররা। এ বিষয়ে বিটিএমএর সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান বলেন, ‘বিভিন্ন নামে ভারত সরকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ ভর্তুকি দেন। বিদেশি সুতা কম মূল্যে এসে দেশের শিল্প যেন নষ্ট না হয়, সেটাই চাই। দেশের সুতাকল বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।’ কেন পিছিয়ে পড়ছে দেশের সুতাকল, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। আরও পড়ুন: রফতানিতে এফওসি সুবিধা বাড়ালে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হওয়ার শঙ্কা! সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানি বাধাগ্রস্ত না করে আমাদের উৎপাদকরা কীভাবে আরও প্রতিযোগিতার সঙ্গে উৎপাদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। সেখানে যদি ভর্তুকি দেয়া হয়, যেটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম লঙ্ঘন করে, তাহলে কিন্তু আমরা কাউন্টারভেলিং ডিউটি বসাতে পারি। তবে, এক শিল্প বাঁচাতে গিয়ে অন্য শিল্প যেন মৃত্যুর দুয়ারে না যায় সেদিকে খেয়াল রেখেই নীতি কৌশল সাজানোর তাগিদ উদ্যোক্তাদের।