তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা, হুমকির মুখে কৃষি-জনস্বাস্থ্য

নীলফামারীর ডিমলায় অধিক মুনাফার আশায় কৃষকেরা আবারও নিষিদ্ধ তামাক চাষে ঝুঁকছেন। তামাক কোম্পানিগুলোর নগদ অর্থ সহায়তা, বিনামূল্যে বীজ-সার এবং আগাম নিশ্চিত বাজারজাতকরণের প্রলোভনে পড়ে কৃষকরা খাদ্যশস্য বাদ দিয়ে তামাক চাষ বেছে নিচ্ছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে জমির উর্বরতা হ্রাস ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় তামাকের ফলন বেশি এবং স্থানীয় পর্যায়ে সহজেই বিক্রি করা যায়। লোকসানের ঝুঁকি কম থাকায় তারা এটিকে লাভজনক ফসল হিসেবে দেখছেন। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তামাক চাষপ্রবণ এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন তামাক চাষ করলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা কমে যায়। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ও পানিদূষণ বাড়ে। পাশাপাশি তামাক পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতের সময় নারী ও শিশুশ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। একসময় প্রশাসনিক উদ্যোগে ডিমলার কিছু এলাকায় তামাক চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামাক কোম্পানির প্রভাব, বিকল্প ফসলের বাজার অনিশ্চয়তা এবং সার সংকটের কারণে আবারও তামাক চাষ বাড়তে শুরু করেছে। অনেক কৃষকের অভিযোগ, তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত ধারণা নেই। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের নিরুৎসাহ মূলক কার্যক্রম সীমিত। সশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক চাষ বৃদ্ধির পেছনে তামাক কোম্পানিগুলোর সক্রিয় তৎপরতা বড় ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের আকৃষ্ট করতে তারা নগদ অর্থ সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ, বিনা মূল্যে বীজ ও সার, চাষকালীন খরচ বহন এবং আগাম চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট দামে তামাক কেনার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। নিশ্চিত বাজার ও দ্রুত লাভের আশায় অনেক কৃষক বিকল্প ফসল বাদ দিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন। বন্দর খড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক তুষার কান্তি রায় বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই আমরা তামাক চাষ করে আসছি। এতে আমাদের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। গত বছর ১০০ শতক জমিতে তামাক করেছি, এ বছর আরও বাড়িয়েছি। খরচ কম, লাভ বেশি। নাউতারা ইউনিয়নের গোদার বাজার এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, তামাক চাষে মাটির ক্ষতি হয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। সরকার যদি বিকল্প ফসল চাষে সহযোগিতা ও বাজার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে আমরা তামাক কমিয়ে অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হব। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১২ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে সরকারি হিসাবের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, তামাক চাষ মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমায় এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। আমরা কৃষকদের ধান, ভুট্টা, সবজি ও ফলজাত ফসল চাষে উৎসাহিত করছি। এতে কাজ না হলে আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো। আমিরুল হক/কেএইচকে/এমএস