সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি খাত

দেশের বেসরকারি খাত স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া বা কথা শুনছে না। এক-দুই মাস পরে তারা চলে যাবেন, কিন্তু ব্যবসায়ীদের কী হবে? নির্বাচনের ঘোষণা ব্যবসায়ীদের কিছুটা আস্থা বাড়িয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকায় ব্যবসায়ীর এখনো ভয়ে আছেন। দেশ ও অর্থনীতির জন্য দ্রুত নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকার ছাড়া ভঙ্গুর এই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। তবে নির্বাচিত সরকার এলেই অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বিষয়টি এমন নয়। আগের অবস্থায় ফিরতে অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। ২০২৬ সালে ব্যবসায়ীদের প্রথম প্রত্যাশাই হলো একটি নির্বাচিত সরকার। দ্বিতীয় চাওয়াটিই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো। জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এমদাদুল হক তুহিন। জাগো নিউজ: দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা? সত্যিকার অর্থে অর্থনীতি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? তাসকীন আহমেদ: ১৬ থেকে ১৭ মাস ধরে আমরা বেসরকারি খাত বিভিন্ন সময় অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা তুলে ধরেছি। দুরবস্থা নিয়ে হইচই করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু আমাদের কথা শুনেনি। উনারা বলেছেন, সব কিছু ভালোর দিকে যাচ্ছে। এখন সরকারি তথ্যই বলছে, কয়েক মাস ধরে টানা রপ্তানি কমছে। তারল্য সংকটের যে অবস্থা- গভর্নর সাহেবই বলছেন, এই ব্যাংক ঠিক হতে পাঁচ থেকে ১০ বছর লাগবে। ব্যাংক ও মানি মার্কেটের অবস্থা যদি ঠিক না থাকে আর আপনি যদি প্রত্যাশা করেন, অর্থনীতি সামনের দিকে বেগবান হবে- সেটি অপ্রত্যাশিত ও সাংঘর্ষিক। বেসরকারি খাতের অবস্থা আগে বলতাম- ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ; কিন্তু এখন বলি স্মরণকালের সর্বনিম্ন খারাপ পজিশনে রয়েছে। অর্থনীতি এর থেকে খারাপ পজিশনে আমার মনে হয় না- দুর্ভিক্ষ যেটা বোধহয় হয়েছিল আরও ৫০ বছর আগে, তার থেকে কোনো এক জায়গায় বেটার পজিশনে আছে। জাগো নিউজ: দেশের অর্থনীতিকে আপনি প্রায় দুর্ভিক্ষের সময়কালের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাসকীন আহমেদ: হ্যাঁ। এর পেছনে বড় অনুঘটক ব্যাংকখাতের এই অস্থিরতা। আমরা এলসি করতে পারছি না। বলছেন রিজার্ভ বেড়ে যাচ্ছে। আমরা আমদানিনির্ভর একটি দেশ। যদি ব্যবসা না বাড়ে, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি না হয়, ডলারের চাহিদাই যদি কমে যায়, তখন রিজার্ভ তো বাড়বেই। দেশের অর্থনীতি বেগবান হওয়ার কারণে রিজার্ভ বাড়েনি। চাহিদা, ক্যাপিটাল মেশিনারি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে বলে এবং ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ না করার কারণে ডলারের চাহিদা কমেছে ও রিজার্ভ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ভালো কাজের জন্য এমনটি হয়েছে সে ধারণা ভুল। বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না থাকায় রিজার্ভ বাড়ছে। জাগো নিউজ: অর্থনীতির ভঙ্গুরতার কথা বলছিলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কী অবস্থা? তাসকীন আহমেদ: ব্যবসার জন্য প্রথমেই দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অভ্যুত্থানের পরে একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা ব্যবসায়ীরাও দেখেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশিরা পণ্য কিনতেও আসবে না, পণ্য বিক্রি করতেও আসবে না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আসে সেটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দেশের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ আগের মতো খরচ করছে না। ব্যবসায়ীরা এখন একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় অর্থনীতি ও ব্যবসা সামনের দিকে এগোবে সেটি মনে করাটাও এক ধরনের বোকামি। জাগো নিউজ: ব্যবসায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী? তাসকীন আহমেদ: প্রথম প্রতিবন্ধকতাটিই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ব্যাংকখাতের অস্থিরতা। বহির্বিশ্ব থেকে পণ্য আমদানি করি, এলসি করি, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড করি, সেখানে রেটিং খারাপ হয়ে গেছে। রেটিং খারাপ করে দেওয়ার কারণে অর্ধেকের বেশি ব্যাংক থেকে এলসি রিসিভ করছে না। তারা বলছে অ্যাড কনফার্মেশন দিতে। রেটিং অনুযায়ী অ্যাড কনফার্মেশন দেওয়ার জন্য আমদানি খরচ প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশ বেড়ে গেছে। তৃতীয় যে সমস্যাটি হচ্ছে সেটি হচ্ছে হঠাৎ করে জ্বালানি সংকট। এই তিনটি সমস্যা আমাদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বাইরে লজিস্টিক, এনবিআরের দুর্নীতি, ট্যাক্স ও ভ্যাটের সমস্যা এবং অবকাঠামো- এগুলো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। তবে গত দেড় বছরে প্রথম তিনটি সমস্যা শুধু আমাদের পথের কাঁটাই নয়, আমাদের অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাগো নিউজ: গত দেড় বছরে বেশ কিছু ব্যবসায়িক সংগঠন স্থবির হয়ে পড়েছে। সংগঠনগুলোতে প্রশাসক থাকায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে? তাসকীন আহমেদ: এখন অর্ধেকেরও বেশি ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বার বন্ধ। যেগুলো সীমিত পরিসরে চলছে, সেই সংগঠনগুলোর নেতারাও একটি অদৃশ্য শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না। এফবিসিসিআইয়ে বিরাজনীতিকরণ করতে গিয়ে প্রত্যেকটি চেম্বারের নির্বাচন তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কিছু সংস্কার ও পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার নিজের পায়েই কুড়াল মেরেছে। কারণ প্রতিটি চেম্বার কিন্তু একটি কোম্পানি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, সেটি ওই সংগঠনের মূল আইন। মাদার আইনের ওপর কোনো আইন হয় না। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারস বা ফিকির ক্ষেত্রে বলেছে, মালিকপক্ষের লোক থাকতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মালিক কোন দেশে থাকে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টারের এমডিও তো জানেন না! ইউনিলিভারও এমন কোম্পানির মালিক কারা- সেটি তো অনেকেরই অজানা। সরকার বলেছে, প্রতিটি মালিককে এখানে মেম্বার হিসেবে থাকতে হবে। এটি খুবই হাস্যকর। বিদেশিদের কাছে আমাদের বিজনেস কমিউনিটির মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। জাগো নিউজ: আমি আবারও ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন করছি। আপনি কেন এই সময়টাকে অর্থনৈতিক দুর্ভিক্ষের সঙ্গে তুলনা করছেন? তাসকীন আহমেদ: সামনে নির্বাচন। আপনার কি মনে হয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আমেজ আছে? আমাদের ভেতরে ভয় নেই? গত দেড় বছরে অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জের মুখে চলে গেছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, তারা (সরকার) ভালো কিছু করবেন, এমন নীতি নেবেন যেটি অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে। সেটি তো নেয়ইনি, বরং আমাদের কথা না শুনে মিডিয়ায় প্রতি উত্তর দিয়েছে। বলেছে, অর্থনীতি খুব সুন্দর চলছে, বিনিয়োগ নাকি অনেক আসছে! এখন কিন্তু তারা চুপ। আমাদের তো এখন মাথাব্যথা- তারা তো চলে যাবেন। পলিটিক্যাল পার্টিরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। আমরা ব্যবসায়ী- যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি, তারা কোথায় যাবো? জাগো নিউজ: আপনার কথায় হতাশা, দুঃখ-বেদনার চিত্র ফুটে উঠছে! তাসকীন আহমেদ: অবশ্যই। হতাশারও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বিগত আমলে ব্যাংকিং সেক্টরে যা হয়েছে, যা ঘটেছে, আমরা কিন্তু এটাকে অস্বীকার করছি না। কিন্তু আপনি ওভারনাইট সবকিছু চেঞ্জ করে ফেলবেন এবং সব দায় ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীর ওপর চাপিয়ে দেবেন, এটি তো কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। জাগো নিউজ: সামনে নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে কতটা সহায়তা করছে? তাসকীন আহমেদ: অর্থনীতি এখন একটা নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও নেতিবাচক অবস্থার দিকেই যাবে। নেতিবাচক এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে ভালো অবস্থায় যেতে দু-তিন বছর সময় লাগবে। এটি শুরু করার প্রথম সমাধানই হচ্ছে- একটি নির্বাচিত সরকার। সেই সরকার যেরকমই হোক। একটি নির্বাচিত সরকার এলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরবে যে, আমরা বেঁচে থাকতে পারবো। এখন তো আমাদের এক্সিস্টেন্স (অস্তিত্ব) নিয়ে প্রবলেম হচ্ছে, হয়তো কারখানা বা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আর নির্বাচন যদি আরও বিলম্বিত হয়, তা দেশের অর্থনীতি বড় বিপদে ফেলবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী। ব্যাংকিং, জ্বালানি, আইনশৃঙ্খলা কীভাবে আবারও ঠিক অবস্থায় আনা যায়- এগুলো নিয়ে আমরা আমাদের প্রেজেন্টেশন নিয়ে রেডি। একটি নির্বাচিত সরকার এলে আমাদের শ্বেতপত্র তুলে ধরবো। অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে প্রথম বছর, তিন বছর, পাঁচ বছরের মধ্যে এই স্টেপগুলো নিতে হবে; সেটি সরকারের কাছে তুলে ধরবো। জাগো নিউজ: নির্বাচনের তফসিল কি আপনাদের মধ্যে আস্থা কিছুটা হলেও বাড়িয়েছে? তাসকীন আহমেদ: কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে পুরোপুরি বাড়ায়নি। আপনার কাছেই আমার প্রশ্ন, আপনি কি শতভাগ কনফিডেন্ট- যে একটা ইলেকশন হবে? আপনিও দোয়া করছেন, আমরাও দোয়া করছি। ব্যবসায়িক সংগঠনের একজন নেতা হিসেবে আমরাও প্রচণ্ড ফেড আপ ও প্রচণ্ড ভীত। এখন তো নিজেদের মধ্যেই ফিল হয়, দেশে একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করে আমরা কি অন্যায় করে ফেলেছি? জাগো নিউজ: ২০২৫ সালের অর্থনীতি কেমন ছিল ও ২০২৬ সাল কেমন হতে পারে? তাসকীন আহমেদ: কথাগুলো আগেও বলেছি। ২৫ সালের পরে ২০২৬ সালে অর্থনীতিতে দ্রুতগতি ফিরে পাবে সেটি ঠিক নয়। নির্বাচন হলেই অর্থনীতিতে রাতারাতি গতি ফিরে পাবে, সেটি চিন্তা করা ভুল। একটি নির্বাচন হয়ে গেলে, তা আস্থা বাড়াবে। সামনের দিকে অনেক কাজ রয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকারকে বেসরকারি খাতের সঙ্গে বসে অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য যে তিন-চারটা পয়েন্ট আপনাকে বললাম- সেগুলো যেমন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যানগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত হবে। জাগো নিউজ: ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে ২০২৬ সালে আপনার প্রত্যাশা? তাসকীন আহমেদ: ২৬ সালে প্রথম প্রত্যাশা অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার। এই নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আমরা যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার সংকট, উচ্চ সুদ হার, লজিস্টিক ও অবকাঠামোগত যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা নিয়ে কাজ করবো। সর্বপ্রথম যে প্রত্যাশাটি থাকবে সেটি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া ও ব্যবসার গতি ফেরাতে ধীরে ধীরে বাকি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া। জাগো নিউজ: খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ কী? তাসকীন আহমেদ: ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই, বর্তমানে খেলাপি ঋণ যেখানে দাঁড়িয়েছে হয়তোবা এর ৫০ শতাংশ দোসররা চুরি করে নিয়ে গেছে। বাকি ৫০ শতাংশ ভালো জেনুইন ক্লায়েন্টরা ব্যবসা করতে না পারার কারণে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এজন্য দায়ী। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংকখাতের এই শোচনীয় অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আপনি এক রাতে সব ঠিক করে ফেলবেন, রাতারাতি করতে গিয়ে আপনি অর্থনীতিকে আরও বিপদে ফেলে দিয়েছেন। জাগো নিউজ: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি দূরত্ব রয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের কথা শুনছে না। বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্যের কথা নিশ্চয় মনে আছে? তাসকীন আহমেদ: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে আমরা ১৭টি সংগঠন যৌথভাবে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিকার হয়নি। বিজিএমইএ সভাপতির মতোই দেশের পুরো ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যথেষ্টভাবে ফ্রাস্ট্রেটেড। হয়তোবা আমরা নিজেদের কন্ট্রোল করতে পেরেছি, উনি পারেননি। আপনাদের কাছে প্রশ্ন বিজিএমইএ কেন, আপনি বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়িক সংগঠনকে কি গত ১৫ মাসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে দেখেছেন? সরকারের কেউ বিজনেস কমিউনিটির কোনো কথা বা সমস্যার বিষয় শুনতে ইচ্ছুক নন। আগেও তাদের ইচ্ছে ছিল না, এখনো নেই। জাগো নিউজ: বিনিয়োগ নিয়ে অনেক আশার কথা শুনিয়েছে সরকার। কী বলবেন? তাসকীন আহমেদ: বেসরকারি খাতে অর্থ বিতরণ বা সরবরাহ ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তার মানে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করছে না। আর বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করে ফেলবে, এমন কী হলো আমাদের বোধগম্য নয়। যদি ডলার এসে থাকে, ডলারগুলো কোথায় রাখা হয়েছে- আমাদের জানান। জাগো নিউজ: এসএমই খাত খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কর্মসংস্থান কমেছে। সামনে কর্মসংস্থানের অবস্থা কী হবে? তাসকীন আহমেদ: আমার মতে, সামনে কর্মসংস্থান আরও হ্রাস পাবে। আরও অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় অর্থনীতি ২০২৬ সাল কেন, ২০২৭ সালেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। করোনার সময়ের পূর্ববর্তী অবস্থায় আসতে আরও পাঁচ থেকে ছয় বছর লাগতে পারে। জাগো নিউজ: কোনো আশার বাণী শোনাবেন? তাসকীন আহমেদ: জাতি হিসেবে আমরা খুবই রেজিলেন্স। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আপামর সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম রয়েছে। দেশপ্রেমের জন্যই রাস্তায় নেমেছি, আমাদের দাবিগুলো বলছি। আমরা আশা রাখবো সামনে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে। জনগণ, ব্যবসায়ী ও নির্বাচিত সরকার মিলে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে অর্থনীতি সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবো। তখন কর্মসংস্থানও বাড়বে। এজন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ইএইচটি/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস