ইসলামের ইতিহাসে হিজরত এক যুগান্তকারী ঘটনা। মক্কা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মদিনার উপকণ্ঠে পৌঁছেছিলেন, সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও জীবন্ত হয়ে আছে মদিনার পাহাড় আর উপত্যকায়। নবীজি (সা.) মদিনায় প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে যে পথে যাত্রা করেছিলেন এবং যেখানে অবস্থান করেছিলেন, তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ফজিলত তুলে ধরা হলো।পবিত্র আকিক উপত্যকা মদিনার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত একটি বরকতময় স্থান হলো আকিক উপত্যকা। এটি সেই পবিত্র উপত্যকা যা দিয়ে হুজুরে পাক (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেছিলেন। এই পথে আজও দেখা মেলে বিশেষ এক ধরণের বুনো গুল্মের, যার নাম ‘জুসজাস’। জুসজাস রসুলুল্লাহ (সা.) যখন এই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন এই উদ্ভিদগুলো তাঁর সামনে ছিল। এই উদ্ভিদের ছোট ছোট হলুদ ফুলের সুবাস অত্যন্ত মনোহর এবং স্নিগ্ধ। নবীজি (সা.) এই সুগন্ধি অত্যন্ত পছন্দ করতেন। হিজরতের শেষ রাত ও মদিনায় প্রবেশের প্রস্তুতি মদিনায় প্রবেশের ঠিক আগের রাতে রসুলুল্লাহ (সা.) এই ওয়াদি আকিকেই রাত কাটিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ইবাদতের জন্য একটি স্থান (মুসল্লা) নির্ধারণ করেন এবং নামাজ আদায় করেন। পরদিন সকালে মদিনা শরিফে প্রবেশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়। নবীজি (সা.) গোসল সেরে পবিত্রতা অর্জন করেন। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিখ্যাত সাহাবি হজরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) রসুল (সা.) এবং হজরত আবু বকর (রা.)-কে নতুন সাদা কাপড় উপহার দিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) সেই নতুন সাদা পোশাক পরিধান করেই মদিনার মূল ভূখণ্ডে যাত্রা শুরু করেন। জাবালে আইর: মদিনার দক্ষিণ সীমানা জাবালে আইর মদিনা শরিফের দক্ষিণ দিকের সীমানা। এখান থেকেই মদিনার ‘হারাম’ বা পবিত্র এলাকার শুরু হয়। মদিনায় প্রবেশের আদব ও শিষ্টাচার রসুল (সা.)-এর পবিত্র শহর মদিনায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ শিষ্টাচার বা আদব রয়েছে। ওলামায়ে কেরাম বলেন, যখনই কেউ মদিনার সীমানায় প্রবেশ করবে, তার উচিত অত্যন্ত ভাবগম্ভীর থাকা এবং মনে অগাধ ভালোবাসা ও সম্মান রাখা। কারণ, এই মাটি ও বাতাসের সাথে মিশে আছে প্রিয় নবীজি (সা.)-এর স্মৃতি। মদিনায় বসবাস ও মৃত্যুর ফজিলত হুজুরে পাক (সা.) মদিনাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। মদিনার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন: ‘যার সামর্থ্য আছে সে যেন মদিনায় থেকে নিজের জীবন অতিবাহিত করে এবং মদিনাতেই যেন তার মৃত্যু হয়। কারণ যে ব্যক্তি মদিনায় মারা যাবে, কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘মদিনাই তাদের জন্য উত্তম, যদি তারা মদিনার মর্যাদা বুঝত। তারা মদিনা ছেড়ে কোথাও যেত না যদি তারা জানত।’ মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মদিনার মর্যাদা বোঝার এবং নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।