ঘুষে মেলে সেবা, না দিলেই ভোগান্তি!

টাকা দিলে কাজ হয় বিদ্যুৎ গতিতে, আর না দিলে বাড়ে ভোগান্তি। এমন অভিযোগ উঠেছে মাদারীপুর জেলা রেকর্ড রুমকে ঘিরে। যেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মাত্র ৩ থেকে ১১ দিনের মধ্যে জমিজমার পর্চার নকল দেয়ার কথা, সেখানে দেড় থেকে দুই মাসেও মিলছে না সেই গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। এতে মামলা-মোকাদ্দমা থেকে শুরু করে জমি কেনাবেচা-সবকিছুতেই চরম বিপাকে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও পর্চার নকল না পেয়ে রেকর্ড রুমের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। কেউ কেউ দেড় থেকে দুই মাস ধরে বারবার আসা-যাওয়া করছেন। এতে একদিকে বাড়ছে সময়ের অপচয়, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচও। জমিসংক্রান্ত মামলা, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা ব্যাংক ঋণের জন্য পর্চার নকল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের ৩ থেকে ১১ দিনের মধ্যেই এই নকল দেয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা মিলছে না। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, দালালচক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এই নকল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। টাকা দিলে দ্রুত কাজ হয়, না দিলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকা থেকে আসা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, সরকারি ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্চার নকল পাচ্ছি না। একাধিকবার অফিসে গেলেও শুধু তারিখই দেয়া হচ্ছে। একই অভিযোগ রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আলিমুজ্জামানের। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে কোনো কাগজ পাওয়া যায় না। অথচ টাকা দিলে দালাল ধরে দ্রুত কাজ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে রাখা হচ্ছে। আরও পড়ুন: ভুয়া সিল ব্যবহার করে জমির দলিল, যৌথবাহিনীর হাতে ধরা সরকার নির্ধারিত হিসাবে সই ও মোহরসহ পর্চার নকলের ফি মাত্র ১২০ টাকা। অতিরিক্ত ৪০ টাকা দিলে ডাকযোগে নকল পাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরেই জমির গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পেতে ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও কার্যকর সমাধান মিলছে না। ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, টাকা না দিলে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের দেখার কেউ নেই। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেকর্ড রুম কর্তৃপক্ষ। মাদারীপুর জেলা রেকর্ড রুমের রেকর্ড কিপার মো. রাসেল মিয়া বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টি আবেদন আসে। জনবল সংকট থাকায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় নকল দিতে দেরি হয়। ইচ্ছাকৃত কোনো হয়রানি করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে দ্রুত সেবা পান, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রেকর্ড রুমে কেউ অনিয়ম বা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এসব আশ্বাসের মধ্যেও সেবাপ্রত্যাশীরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।