শোক নিয়ে পেশাদারিত্ব রক্ষা করা কঠিন ছিল, তবে কমতি রাখেননি মিঠুন-শান্তরা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক শোকাবহ দিন ছিল আজ। এদিন মাঠের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলী জাকি। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি অভিজ্ঞ এই কোচকে। কোচের মৃত্যুর সংবাদ ম্যাচের মধ্যেই জানতে পেরেছিলেন ক্রিকেটাররা। দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই কোচের মৃত্যু।অনেকের মনেই তাৎক্ষণিকভাবে দাগ কেটেছে। তবে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে নিজেদের সামলে নিয়ে খেলে গেছেন বলে জানান দুই দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মোহাম্মদ মিঠুন।  খেলোয়াড়ি জীবন শেষে গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন জাকি। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে বিসিবির গেম ডেভলপমেন্টে অনেকদিন ধরে কাজ করছেন তিনি। ফলে বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই সরাসরি কোচ তিনি। আর সে কারণেই তার মৃত্যুর বিষয়টি দাগ কেটেছে ক্রিকেটারদের মনে। যেই ম্যাচের আগে মারা গেলেন জাকি, রাজশাহী-ঢাকার সেই ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শোকের সুর ছিল দুই অধিনায়কের কণ্ঠেই।  রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত সংবাদটিকে হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে জানান, ম্যাচের মাঝে এই সংবাদ জানার পর সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তবে পেশাদারিত্ব রক্ষায় নিজেদের ঠিক রাখার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তিনি।  আরও পড়ুন: জাকির সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলো ঢাকা ক্যাপিটালস শান্ত বলেন, 'সবাই শোকাহত ছিল। সবাই চুপচাপ ছিল, সবারই মন খারাপ ছিল। এই মন খারাপ নিয়েই সবাই খেলেছে। তবে এটা মাথায় নিয়ে ক্রিকেট খেলেছি, এমনটা বলতে চাই না। প্রফেশনাল ক্রিকেটে পেশাদারিত্ব রক্ষা করাটা তো জরুরি। তবে আজকের দিনটা প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য কঠিন ছিল।'  দূর থেকে হলেও জাকির পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন শান্ত, 'খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। লম্বা সময় তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। খেলোয়াড়দের অনেক সাপোর্ট করতেন। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। কারো সঙ্গে কোনো ভুল-ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন। অনেক কঠিন একটা ব্যাপার, দূর থেকে হলেও তার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।'  আরেক অধিনায়ক মিঠুনের চোখে মুখেই ছিল শোকের স্পষ্ট ছাপ। সংবাদ সম্মেলনে এসেও এই প্রসঙ্গেই বেশি কথা বলেছেন তিনি। জাকিকে হারানোর ঘটনা দেশ এবং দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন তিনি।   জাকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা খুবই কঠিন, আমাদেরই দলের একজন তিনি.... খেলোয়াড়দের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশতেন। কখনোই হেডমাস্টার টাইপের ছিলেন না। চেষ্টা করতেন খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার। এটা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও তিনি অনেক বছর ধরে সার্ভিস দিচ্ছেন। একজন অভিজ্ঞ মানুষ হারিয়ে গেল আমাদের মাঝ থেকে। তবে দিনশেষে এগুলোতে কারোরই হাত নেই।'  আরও পড়ুন: মাঠ থেকেই জাকিকে বিদায় দিলো বিসিবি জাকির অসুস্থতা সম্পর্কে দলের মধ্যে কারো কোনো ধারণাও ছিল না বলে মন্তব্য করে মিঠুন বলেন, 'যতটুকু শুনেছি, তিনি একটু খারাপ অনুভব করছিলেন মাঠে নামার আগেই। তবে মাঠে তিনি চেষ্টা করেছেন স্বাভাবিক যে কাজগুলো করেন সেগুলো করার। আজকে তিনি নাসিরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পড়ে যান....পড়ে যাওয়ার পর আমাদের যতটুকু রিসোর্স ছিল... ডাক্তার এসেছে, ফিজিও এসেছে, ট্রেনার ছিল....তাদের যতটুকু করণীয় ছিল করেছে। আমরাও ছিলাম সেখানে। পরে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়...আমরা মাঠে নামার পর জানতে পারি।'  তিনি আরও বলেন, 'এরকমটা আসলে কেউই আন্দাজ করতে পারেনি। কালকেও আমাদের যে টিম সিলেকশন মিটিং ছিল রাত ১০টায়, সেখানেও তিনি হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। খুবই স্বাভাবিক ছিলেন। এমনকি আজ সকালের নাস্তার সময়ও তার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমার কাছে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তিনি যে অসুস্থবোধ করছেন, আমার ধারণা কোনো ফিজিও তেমন জানতো না। আমরা যদি জানতাম তিনি অসুস্থবোধ করছেন, তাহলে তাকে বিশ্রামে থাকতে বলতাম। তবে এমনভাবে কিছুই জানা যায়নি।'  শোক বয়ে নিয়েও খেলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মিঠুন বলেন, 'আমরা যখন ফিল্ডিংয়ে ছিলাম....৬/৭ নম্বর ওভার চলছে। তখন আমাদের কাছে খবরটা এসেছে। ওইসময় আমরা বুঝেই উঠতে পারছিলাম না কী প্রতিক্রিয়া দেখাব৷ আমাদের মাঝ থেকে একটা মানুষ চলে গেল....যার সঙ্গে আমাদের এত বছরের সম্পর্ক, যিনি ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছেন, শোনার পর অবশ্যই সবাই অনেক মর্মাহত ছিল। তবে আমরা যেহেতু মাঠে নেমে গেছি, তখন আসলে খেলায় মনোযোগ দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। আমরা নিজেদের সামলে নিয়ে মাঠে কিভাবে নিজেদের সেরাটা দেয়া যায়, সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সবাই অনেক শোকাহত ছিলাম।'  জাকির মৃত্যুর দিনে অবশ্য মাঠে জয় পেয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালস। বিশেষ এই জয় কোচকে উৎসর্গ করেছে দলটি।