পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৩৫ বস্তায় পাওয়া গেল কত টাকা?

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বাড়ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানের টাকার পরিমাণ। দেশের একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাগলা মসজিদ, যার দান সিন্দুক খুললেই পাওয়া যায় কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশি মুদ্রা এমনকি সোনা দানা! এরই মধ্যে শত কোটি টাকার মাইলফলক পার হয়েছে শুধুমাত্র ব্যাংকে জমানো টাকায়। এবার ঐতিহাসিক পাগলামি মসজিদের দান বাক্স থেকে পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা।শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মসজিদের ১৩টি লোহার সিন্দুক থেকে বের করে আনা হয় ৩৫ বস্তা টাকা। সারাদিন গণনার পর সন্ধ্যায় জানা যায় টাকার পরিমাণ। নগদ টাকা ছাড়াও ছিল বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও। এর আগে সকাল পৌনে ৭টায় শুরু হয় মসজিদের নিচ তলার বিভিন্ন স্থানে থাকা দানবাক্স থেকে টাকা সংগ্রহ কার্যক্রম।এবার ৩ মাস ২৭ দিন পর দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়। বড় বড় ১৩টি লোহার সিন্দুক থেকে বের করে আনা হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। বস্তায় ভরে এসব টাকা নেয়া হয় মসজিদের দ্বিতীয় তলায়। প্রতি তিন মাস পর পর প্রতি তিন মাস পর পর এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে।ভোরে কিশোরগঞ্জের জেলা জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার নেতৃত্বে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের নিচতলায় বিভিন্ন স্থানে থাকা দানসিন্দুকগুলো একে একে খোলা হয়। এরপর প্লাস্টিকের বস্তাভর্তি টাকা নেয়া হয় দ্বিতীয় তলায়। মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।দানবাক্স খোলার সময় কিশোরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খানসহ বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।গণনার কাজে অংশ নেয় পাগলা মসজিদ নূরানী কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১০০ জন শিক্ষার্থী, শহরের আল জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার ২০০ শিক্ষার্থী, রপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাড়ে ৪০০ মানুষ।বান্ডেল করার পর টাকা গণনায় ব্যবহার করা হয় ইলেট্রনিক মেশিন। টাকা গণনাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয় নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনভর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদ ঘিরে তুরস্কের মসজিদগুলোর আদলে ইসলামিক কমপ্লেক্স হবেজনশ্রুতি আছে, কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে  এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের আস্তানা ছিলো। ওই সাধকের মৃত্যুর পর সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পরে মসজিদটি পাগলা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়।পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাস থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ মসজিদে দান করে থাকেন। দিন দিন বাড়ছে দানের টাকার পরিমাণ। দানের টাকা রাখা হয় শহরের রুপালি ব্যাংকের হিসেবে। এ টাকার লভ্যাংশ দিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেয়া হয়।পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার আনুষঙ্গিক খরচ বাদে বাকি টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে থাকা একটি রুপালি ব্যাংকের হিসেবে। দানের টাকা দিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক।জেলা প্রশাসক জানান, এরই মধ্যে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্সের নকশা অনুমোদন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।সবশেষ গত ৩০ আগষ্ট দানবাক্স খোলা হয়। তখন পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। এর আগে ১২ এপ্রিল দানসিন্দুক খোলা হয়। তখন পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা।শনিবার দান সিন্দুক থেকে পাওয়া টাকাসহ ব্যাংকে জমানো মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা। তবে সরকারি ট্রেজারিতে জমা রাখা স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রা এই হিসেবের বাইরে।