আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যেকোনো সময় এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।তবে জোট ঘোষণার আগেই এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন এনসিপির আরও কয়েক নেত্রীও। তবে এনসিপি সূত্র বলছে, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্য ২১৪ জন। এর মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে পক্ষে ‘মত দিয়েছেন’ ১৮৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট বা সমঝোতার তীব্র বিরোধিতা করে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে একটি ‘বিস্ফোরক’ চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন শীর্ষ নেতা। চিঠিতে এই জোটের প্রচেষ্টাকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ এবং ‘আদর্শিক আত্মহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আরও পড়ুন: তাসনিম জারার পদত্যাগের পর এনসিপির ৩ নেত্রীর ফেসবুক পোস্টসমঝোতার বিরোধিতা করে স্মারকলিপি দেয়া নেতারা হলেন- যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, ফরিদুল হক, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া এবং ইমন সৈয়দ; কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, নুসরাত তাবাসসুম, খালেদ সাইফুল্লাহ; দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা মো. শওকত আলী, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, নফিউল ইসলাম, হামযা ইবনে মাহবুব, নয়ন আহামেদ ও আসাদ বিন রনি; উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী; যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ্, খান মো. মুরসালীন, মো. সাদ্দাম হোসেন এবং আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল প্রমুখ। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।চিঠিতে নেতারা সাফ জানিয়েছেন, কৌশলগত কারণে এনসিপির ঘোষিত নীতি ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা বিসর্জন দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।চিঠিতে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কঠোর সমালোচনা করে নেতারা বলেন, গত এক বছর ধরে জামায়াত-শিবির বিভাজনমূলক রাজনীতি, অন্যান্য দলের ভেতর গুপ্তচরবৃত্তি, স্যাবোটাজ এবং এনসিপির ওপর নিজেদের অপকর্ম চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি অনলাইন ফোর্সের মাধ্যমে এনসিপি ও এর ছাত্রসংগঠনের নারী সদস্যদের ‘চরিত্র হনন’-এর মতো গুরুতর অভিযোগও তোলা হয়েছে চিঠিতে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ধর্মকে কেন্দ্র করে ‘সামাজিক ফ্যাসিবাদের’ উত্থান দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও পড়ুন: এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন তাসনিম জারানেতারা তাদের আপত্তির ভিত্তি হিসেবে জামায়াতের ১৯৭১ সালের বিতর্কিত ভূমিকা ও গণহত্যার সহযোগিতার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বিমুখী অবস্থানের সমালোচনা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতঃপূর্বে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ৩০০ আসনেই একক প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার পর এখন সামান্য কিছু আসনের লোভে জোটে যাওয়া চরম রাজনৈতিক বিশ্বাসহীনতার পরিচয়।বিদ্রোহী এই নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জামায়াত জোটের খবরের পরেই সাধারণ সমর্থক ও মধ্যপন্থি ভোটাররা দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। অবিলম্বে এই অবস্থান থেকে সরে না এলে এনসিপি তার ভিত্তি হারাবে বলে তারা মনে করেন।