'আগুনে সব শ্যাষ, বাকি আছে শুধুই খুঁটি'

'আগুনে সব শ্যাষ, বাকি আছে শুধুই খুঁটি। মিচে কথা কবোনা। দুডে ছোয়াল মরার পরতে মানষে দেয়। খেতা, কম্বল, শাড়ি, খাট সব দিছিল মানষে। সব পুড়ে গেছে। এহন আর কিচ্ছু নাই। ওরে বাপ, কয়ডা টিনমিন যদি পাতাম, নাতি ছোয়ালডা নিয়ে এটু থাকতাম।'শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথ ঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব জহুরা খাতুন। শুক্রবার গভীর রাতের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে তার মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু। শুধু জহুরা খাতুন নন, তার মতো আরও তিনটি পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে।শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তদের মতে, রাত আড়াইটার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চারটি পরিবারের সর্বস্ব।প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। অগ্নিকাণ্ডে চারটি টিনের ঘর, দুটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ৪টি ছাগল, ৯টি চিনা হাঁস, ৩৫টি মুরগি এবং ঘরে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের অন্তত ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।জহুরা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথের কুমারখালী পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকার মৃত কিয়ামুদ্দিন শেখের স্ত্রী। ২০ বছর আগে বড় ছেলে মানিক এবং ৩ বছর আগে ছোট ছেলে রতনকে হারিয়ে নাতি আনোয়ার হোসেনের (২৭) সাথে থাকতেন তিনি।এছাড়াও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জহুরা বেগমের ভাতিজা (ভ্যানচালক) কামাল হোসেন, কামাল হোসেনের ছেলে হৃদয় হোসেন ( ২২) এবং প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিনের পরিবার।আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে আগুনে কর্মচারী নিহত, জীবিত উদ্ধার ১৫ক্ষতিগ্রস্ত নাজিম উদ্দিন জানান, আগুনের গন্ধে রাত আড়াইটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই দেখেন ঘরে আগুন। কোনোমতে এক কাপড়ে নিজের ভ্যানটি নিয়ে বের হতে পারলেও বাকি সব পুড়ে গেছে। তার মতে, হৃদয়ের ভ্যান চার্জ দেওয়ার ঘর থেকেই আগুনের সূত্রপাত।অন্যদিকে, স্থানীয় প্রতিবেশী সাজু শেখ অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়ার পর তারা পৌঁছাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নিয়েছে। ফলে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের লিডার আলী হোসেন জানান, রাত ৩টায় '৯৯৯' এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ৩টা ৩ মিনিটেই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন। তদন্ত শেষে আগুনের সঠিক কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানানো হবে।শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, পোড়া স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইট-সিমেন্টের কয়েকটি খুঁটি। বাতাসে তখনও পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়া। ক্ষতিগ্রস্ত ময়না খাতুন বলেন, 'আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারের কাছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।'কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আখতার জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তরা লিখিত আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।