মিয়ানমারে ‘বিতর্কিত’ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে

নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সরকার উৎখাতের প্রায় পাঁচ বছর পর মিয়ানমারের কিছু অংশের ভোটাররা আজ রোববার ভোট দিচ্ছেন। সমালোচকরা এই নির্বাচনকে দেশটির জেনারেলদের সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।সামরিক সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন হবে তিন ধাপে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম দফার ভোট গ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় দেশটির বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপ আগামী বছরের ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি হবে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ। দেশটির নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী নেইপিদো, বাণিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ জান্তানিয়ন্ত্রিত সব শহর ও গ্রামাঞ্চলে রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। জাতীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভা উভয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। এবার দেশটির মোট ৩৩০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২৬৩ এলাকায় নির্বাচন হবে। শুধু সেনানিয়ন্ত্রিত এলাকায়গুলোতেই নির্বাচন হচ্ছে। অন্যান্য এলাকা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। আরও পড়ুন: ভোটের আগে সামরিক অভিযান কেন জোরদার করল মিয়ানমার? জান্তা সরকারের দাবি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে একদিনে ভোট সম্ভব নয়। তবে বাস্তবে দেশের বড় অংশ এখনো সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে থাকায় সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে কি না- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বিতর্ক বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতি। প্রধান রাজনৈতিক দল অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি- এনএলডি দেশটিতে নিষিদ্ধ। কারাগারে আছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে একাধিক দলও। ফলে ভোটের মাঠে শক্তিশালী বিরোধী না থাকায় এই নির্বাচনকে অনেকেই বলছেন ‘নিয়ন্ত্রিত’ বা পূর্বনির্ধারিত ফলের নির্বাচন। তবে ভোটে জনগণের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করেছে জান্তা সরকার। আরও পড়ুন: আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দ্বিমুখী চাপে মিয়ানমারের জনগণ এদিকে আন্তর্জাতিক মহলেও এই নির্বাচন নিয়ে রয়েছে গভীর সংশয়। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও সহিংসতা বন্ধ না হলে অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার তুলনামূলক নীরবতা জান্তা সরকারের জন্য কূটনৈতিক স্বস্তি তৈরি করেছে। যা আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা হলেও কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকার কারণে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক কাঠামোর আড়ালে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তাই নির্বাচনের পরও প্রকৃত ক্ষমতা যে সেনাবাহিনীর হাতেই থাকবে বলে ধারণা করছেন তারা।