অস্বস্তি আর বিড়ম্বনার অপর নাম ঢাকা-১৬

সব সুবিধাই হাতের নাগালে। নতুন শহর, পরিকল্পিত আবাসন। তবুও অস্বস্তি আর বিড়ম্বনার অপর নাম ঢাকা-১৬। মিরপুর, রূপনগর ও কালশির একাংশ নিয়ে গঠিত এই আসনে জলাবদ্ধতা, পানি কিংবা গ্যাস সংকট নিত্যদিনের। তবে এসবের বাইরে নিরাপত্তাই যেন সবচেয়ে বড় চাওয়া ভোটারদের কাছে। সব সমস্যা সমাধান করে এক অনন্য শহর গড়তে মরিয়া প্রার্থীরা।এম শাহরিয়ার, একজন বেসরকারি কর্মজীবী। ২০০৮ সাল থেকে বসবাস করেন পল্লবীতে। গল্পে গল্পে উঠে আসে, ঢাকা-ষোল রাজধানীর অন্য আট দশটি আসনের মতোই। ৫ আগস্ট যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তা এখন দুঃস্বপ্ন। তিনি বলেন, আপনার-আমার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক পদ্ধতিটা পুরোই ভিন্ন। আমরা আবেগপ্রবণও বেশি। আমাদের আগে যেটা হয়েছে, এখনও সেটাই হবে। শাহরিয়ার যে দোকানে এসেছেন, সেই দোকানি আলমগীরের হতাশা আরও গভীর। আলমগীর বলছেন, আটত্রিশ বছর আগে তিনি যখন ওই এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন, তখন এই পল্লবী ঝিল ছিল, পানিতে মাছ ধরা যেত। বদলে যাওয়া সময়ে আলমগীর মুখ না খুললেও তার স্ত্রী যেন অকপট, এখানকার সমস্যা আর সংকট কতটা প্রকট! প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাক, বলে যান একদমে। তিনি বলেন, ‘হামলা, দোকানে চাঁদাবাজি-- এসব চাই না। সুষ্ঠুভাবে উপার্জন করে শান্তিকে থাকতে চাই।’ আরও পড়ুন: ঢাকা-১২: নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন, কোন প্রার্থীর কী অঙ্গীকার? সংসদীয় আসন ঢাকা-১৬ উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড, যা মিরপুরের পল্লবী দুয়ারী পাড়া, ও রুপ নগর কালসির একাংশ নিয়ে গঠিত। যাত্রা শুরু ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে। পুরো আসনের যোগাযোগ অবকাঠামো নিয়ে স্বস্তি আছে। তবে গ্যাস ও পানি সংকটের পাশাপাশি বর্ষার জলাবদ্ধতায় নাকাল বাসিন্দারা। দুই নম্বর ওয়ার্ডের হোপ মার্কেটে সড়কের অর্ধেক অবৈধ দখলে রয়েছে। পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি নিত্যদিনের। জনপ্রত্যাশা হলো, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি হাসপাতাল কিংবা খেলার মাঠ। এর চেয়েও বেশি চাওয়া, নিরাপত্তা। ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনে বিজয়ের অন্যতম নিয়ামক হতে পারে বিহারি ভোটার। মানবেতর জীবনে অভ্যস্ত এই জনগোষ্ঠীর ভোট নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরাও। আর প্রার্থীদের মুখেও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি বরাবরের মতোই। আরও পড়ুন: ঢাকা-৫ আসনে ‘পাহাড়সম’ সমস্যা, প্রার্থীরা দিচ্ছেন ‘রূপান্তরের’ প্রতিশ্রুতি বিএনপি প্রার্থী আমিনুল হক বলেন, ‘এমন একটি জনবান্ধব সরকার হবে, যেখানে কোনো জটিলতার কারণে আমার এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা তাদের কোনো কাজ ব্যাহত হবে-- এমন কোনো কাজ আমরা করবো না।’ জামায়াত প্রার্থী কর্নেল আব্দুল বাতেন বলেন, মিরপুরে একটা সমস্যা হচ্ছে, মাদক এবং চাঁদাবাজি। আমি এবং আমার দল দেশ শাসনের সুযোগ পেলে আমরা কোনো অবস্থাতেই এসবের পৃষ্ঠপোষকতা করবো না। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী আহসানুল্লাহ কাসেমী বলেন, ‘ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন করাই হচ্ছে আমার মূল লক্ষ্য।’ একজন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন যে এলাকার ভালো-মন্দ সব কিছুই নির্ভর করে তাদের ইচ্ছার ওপর। ভোটারদের প্রত্যাশা, তাদের সুশাসনের ইচ্ছাটা ফিরুক।