ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসের (নগর বাউল) সংগীতানুষ্ঠান বন্ধের পর আট বছর ধরে চলে আসা নবমবারের মতো বর্ণিল ঘুড়ি উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবছর গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বর্ণিল এ ঘুড়ি উৎসবে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রতিবছরের মতো শহরের পদ্মার পাড় ধলার মোড়ে এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজনের কথা ছিল। কয়েকদিন ধরে আয়োজন করা বিকেলের এ অনুষ্ঠানটি সকালে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করে আয়োজকরা সবকিছু গুটিয়ে নেন ও ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আগতদের না আসার অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা। প্রশাসন ও আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের সদর উপজেলার পদ্মার চরের ধলার মোড়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে ঘুড়ি ও ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ উৎসবে প্রতিবার শতাধিক প্রতিযোগী বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙ-বেরঙের ঘুড়ি নিয়ে অংশ নেন। এর মধ্যে থাকে মাছ, ঈগল, লেজযুক্ত ঘুড়ি, প্রজাপতি, চিল, লেজছাড়া ঘুড়িসহ নানা ধরনের ঘুড়ি। দর্শনার্থীদের পদচারণায় ওই এলাকা আরও উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। প্রতিবছরের মতো এবারও নবমবারের মতো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ মুহূর্তে ঘুড়ি উৎসবটি স্থগিতের নির্দেশনা দেয় করে প্রশাসন। প্রতি বছর পরিবার ও পরিজন নিয়ে ঘুড়ি উৎসবে আগত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর অনুষ্ঠানটি বন্ধের দিনে হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অংশ নেই। খুব ভালো লাগে। এখানে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। ছোট বেলার শৈশবের স্মৃতি ফিরে পাই। এবার বন্ধের কারণে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তারপরও স্থগিত জেনেও ধলার মোড়ে ঘুরতে যাই। বন্ধের খবরের পরও অনেক দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। আগতরা কিছুসময় কাটিয়ে মন খারাপ করে ফিরে যান। ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশনের সভাপতি, ফরিদপুর সিটি’ পেজের উদ্যোক্তা ও অনুষ্ঠানের আয়োজক মো. এমদাদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ঘুড়ি ওড়ানো এখন একটি উৎসব। এটি ধরে রাখতে ও জনপ্রিয় করতে আমরা নবমবারের মতো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করি। হাতে তৈরি ঘুড়ি নিয়ে শতাধিক ঘুড়ি শিল্পী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানটিতে পেপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরও ৪টি প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করে ও সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। শেষ মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। মূলত ফরিদপুর জিলা স্কুলে জেমসের কনসার্টে ঝামেলা ও বন্ধের কারণে আমাদের আয়োজনটাও স্থগিত করে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও অনুষ্ঠানের স্পন্সর এবং আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক(ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল রাতে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসের কনসার্ট বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পেরে ইটপাটকেল ছুড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে কনসার্টটি বন্ধ করা হয়। পদ্মার পাড়ে ধলার মোড়ে নবম ঘুড়ি উৎসবটিতে আমার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ধলার মোড় এলাকাটি অনেক বড়। উৎসবে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে। মূলত গতকালের ঘটনা ও মানুষের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে এসে অনুষ্ঠানটি স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছরপূর্তি ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে জিলা স্কুল চত্বরে জেমসের সংগীত পরিবেশন শুরুর আগ মুহূর্তে বহিরাগতদের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বাধা দিলে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মঞ্চ দখলের চেষ্টা চালায়। এতে মুহূর্তেই অনুষ্ঠানস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ও কনসার্ট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নবম ঘুড়ি উৎসব স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এন কে বি নয়ন/এমএন/এএসএম