হিজরতের পথে ওয়াদি সাহু ও হামরাউল আসাদের বরকতময় প্রাঙ্গণে

মক্কা থেকে মদিনার হিজরত পথের প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে আছে ইসলামের স্বর্ণালি ইতিহাস। আমাদের কাফেলার আজ পঞ্চম দিন। গতরাত ওয়াদি-এ-রীম-এ অতিবাহিত করার পর বরকতময় জুমার দিনটি শুরু হয়েছে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক আবেশে।মদিনার প্রথম হাতছানি সাথিরা মিলে ফজরের নামাজ ও দীর্ঘ সময় জিকির শেষে আমরা যাত্রা শুরু করি ‘ওয়াদি সাহু’ অভিমুখে। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল প্রিয় নবী (সা.)-এর নিয়মিত যাতায়াতের পথ। এই স্থানটি মূলত একটি উচ্চভূমি, যেখান থেকে দূর দিগন্তে মদিনা মুনাওয়ারার জনপদ দৃশ্যমান হতে শুরু করে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে মদিনার পানে ঢালু পথ। চিঠি উদ্ধারের ইতিহাস আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল ‘রাজা খাক’। এটি সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে এক সাহাবির পাঠানো গোপন চিঠিটি হজরত আলি (রা.) উদ্ধার করেছিলেন। ইতিহাসের পাতায় এই স্থানটির গুরুত্ব অপরিসীম। হামরাউল আসাদ ও বীর আর-এর স্মৃতি আমরা আবয়ার-এ-মাশি (যার প্রাচীন নাম আল-খালায়েক) অতিক্রম করে এসে পৌঁছাই ‘হামরাউল আসাদ’-এ। সামনে দৃশ্যমান লাল পাহাড়ের টিলাগুলোই পরিচয় দিচ্ছে এই প্রান্তরের। এই পাহাড়ের ঠিক পেছনেই অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘বীর আর’। উল্লেখ্য, উহুদ যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই এই হামরাউল আসাদ প্রান্তরে শত্রুপক্ষের সঙ্গে মুসলিম বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছিল। জিবরাঈল (আ.)-এর আগমনের ভূমি সফরের অন্যতম আবেগঘন মুহূর্ত ছিল ওয়াদি আকিক-এ পৌঁছানো। রসুল (সা.) এই উপত্যকা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘জিবরাঈল (আ.) এসে আমাকে এই বরকতময় উপত্যকায় নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’ নবীজি (সা.) এখানে রাতযাপন করেছিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এই উপত্যকাকে বরকতময় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দোয়া কবুলের মুহূর্ত আমরা এখন অবস্থান করছি সেই বিশেষ গুল্ম বা উদ্ভিদরাজির কাছে, যেখানে অবস্থানকালে রসুল (সা.) মদিনার সীমানায় প্রবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এখানেই তিনি গোসল সেরে ও নতুন পোশাক পরিধান করে মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। বর্তমানে জুমার দিনের সূর্যাস্তের পূর্বের সেই বিশেষ মুহূর্ত, যখন দোয়া কবুল হয়-- আমরা এই ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণে জিকির ও দোয়ায় মশগুল আছি। আজকের রাতটি আমরা এই পবিত্র ও বরকতময় প্রান্তরেই অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিহাসের স্পর্শ নিয়ে আমাদের এই কাফেলা এখন মদিনার প্রবেশদ্বারেই অপেক্ষমাণ।