টানা ছুটিতে সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদে পর্যটকের ঢল

বড়দিনসহ টানা ছুটিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শীত উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের দর্শনার্থীরা প্রাচীন নির্দশন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। সুন্দরবনের কটকা, করমজল, হাড়বাড়িয়াসহ ভ্রমণ স্পটগুলোতে নির্মল পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের সাথে আনন্দ উপভোগ করছেন পর্যটকরা। এছাড়া বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খানজাহান (রহ.) মাজার এলাকায়ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে কয়েকগুণ।শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ছুটির দিনে ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কর্তৃপক্ষকে। সকাল থেকেই হাজারো দর্শনার্থী সেখানে ভিড় করেন। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে, আবার কেউ পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রাচীন নিদর্শন দেখতে আসছেন। অভিভাবকরা সন্তানদের ষাটগম্বুজ সম্পর্কে জানাতে নিয়ে এসেছেন। মসজিদ ক্যাম্পাসে থাকা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ করছে শিশুরাও। টানা ছুটিতে অনেকে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে ও নামাজ পড়ে প্রশান্তি অনুভব করছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ ও সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন এবং দিনে দিনেই গন্তব্যে ফিরে যেতে পারছেন। ঢাকা থেকে আসা চাকরিজীবী জান্নাতুল সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া প্রায় সাড়ে ৬০০ বছর আগে নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদ বাচ্চারা বইতে পড়েছে। প্রাচীনতম নিদর্শন দেখাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছি। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। এখানে আবারও আসব।’ আরও পড়ুন: নিরাপদ পানির অভাবে হুমকিতে বাগেরহাট আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের বাচ্চা উৎপাদন সুন্দরবনে ঘুরতে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিল সুন্দরবন ঘুরতে আসব। বড়দিনসহ ৩ দিনের ছুটি পেয়ে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে চলে এলাম। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। বিভিন্ন রকম বন্যপ্রাণী দেখলাম। নিজ হাতে হরিণকে গাছের পাতা খাইয়েছি। কাছ থেকেই বানরের লাফালাফি দেখেছি।’ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের অন্যতম পর্যটন স্পট কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. মতিউর রহমান শনিবার মুঠোফোনে জানান, সুন্দরবনে পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। প্রতিদিন লঞ্চ ও জাহাজে করে শত শত পর্যটক সুন্দরবনে আসছেন। তিনি বলেন, ‘শনিবার একদিনে এ মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৮টি জাহাজে করে দুই সহস্রাধিক পর্যটক কটকা পর্যটন কেন্দ্রে এসেছেন। পর্যটকরা কটকায় মায়াবী চিত্রল হরিণের ছোটাছুটি এবং নদী ও খালের চরে কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এছাড়া পর্যটকরা জামতলা সমুদ্রসৈকতে ঘোরাঘুরি এবং কেউ কেউ সাগরের পানিতে গোসল করছেন।’ সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. আজাদ কবীর বলেন, ‘বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটকের ঢল নেমেছে। বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক করমজলে ঘুরতে এসেছেন।’ আরও পড়ুন: মায়ের ইচ্ছে পূরণে হেলিকপ্টারে বরকে নিয়ে বাবার বাড়িতে কনে ট্যুর অপারেটর অব সুন্দরবন (টোয়াস)-এর সেক্রেটারি নাজমুল আযম ডেভিট বলেন, ‘সুন্দরবনে বর্তমানে পর্যটকের প্রবাহ বাড়লেও গত বছরের তুলনায় এ বছর কম সংখ্যক পর্যটক সুন্দরবনে যাচ্ছেন।’ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটকের যাতায়াত বেড়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বিভাগীয় দফতর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ১৮টি ট্যুর পারমিশন ইস্যু করা হয়েছে। এই ১৮টি পারমিশনে ৬১১ জন দেশি ও ১৩ জন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়েছেন। পর্যটকদের গাইড সাপোর্টসহ সার্বিক নিরাপত্তায় বনরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ‘তিন দিনের টানা ছুটিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আগের তুলনায় কয়েকগুণ দর্শনার্থী বেড়েছে, যা সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত তিন দিনে প্রায় ১০ হাজার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী এখানে এসেছেন।’