নতুন বছরে নিজেকে ভালো রাখতে যে অভ্যাস গড়ে তুলবেন

মানসিক স্বাস্থ্য এমন একটি বিষয়, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার প্রভাব স্পষ্ট। নতুন বছরে নিজেকে শক্ত, শান্ত ও ইতিবাচক রাখতে চাইলে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দৈনন্দিন ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনেই মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে উন্নত করা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক বছরের শুরুতে কী কী অভ্যাস গড়ে তুলবেন-  ১. ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু অতিরিক্ত মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্ক্রিনের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানসিক চাপ বাড়ায়। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ফোন থেকে দূরে থাকা, অর্থাৎ ডিজিটাল ডিটক্স, আপনার মনকে স্বস্তি দিতে সাহায্য করে। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, পরিবারের সঙ্গে কথা বলা অথবা নিজের প্রিয় কোনো কাজে মন দেওয়া মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২. মেডিটেশন বা ধ্যান করা মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে মননশীলতা অনুশীলন অত্যন্ত কার্যকর। বর্তমান মুহূর্তে জীবনকে গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুললে অযথা দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যৎ ভাবনার চাপ কমে। ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং নীরবে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ধ্যান মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং মানসিক স্থিরতা তৈরি করে। ৩. সঠিক ঘুমের অভ্যাস করাঅনিয়মিত বা কম ঘুম মানসিক অবসাদ, মনোযোগের অভাব ও বিরক্তি তৈরি করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখে। সময়মতো ঘুমানো ও একই সময়ে ওঠার অভ্যাস নতুন বছরে মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। ৪. শারীরিক ব্যায়াম করা শরীর ও মনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে। হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা শরীরচর্চা প্রাকৃতিকভাবে এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মেজাজকে ভালো রাখতে সহায়ক। নতুন বছরে প্রতিদিন কিছু সময় শরীরচর্চার জন্য বরাদ্দ করলে মানসিক স্বাস্থ্য  উন্নতি পাবেন। ৫. কৃতজ্ঞতার চর্চা করাজীবনের ছোট ছোট আনন্দকে উপলব্ধি করা মানসিক স্বাস্থ্য জন্য প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন আনন্দের মুহূর্তগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মন ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়, মানসিক চাপ কমে এবং জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। ৬. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করাশাকসবজি, লিন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন। প্রতিদিন আপনার খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকা জরুরি। শরীরে কোনো পুষ্টির ঘাটতি (যেমন ভিটামিন ডি, আয়রন) আছে কি না তা জানতে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করান। খাদ্যতালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি অন্তর্ভুক্ত করুন। বেলা তিনটার পর ক্যাফেইন বা কফিজাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৭. নিজের মানসিক শান্তিকে গুরুত্ব দেওয়া নতুন বছরে ধীরে চলা শিখুন, নিজের জন্য সময় বের করুন এবং মানসিক প্রশান্তিকে অগ্রাধিকার দিন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত জীবন সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০২৬ সাল হোক মানসিক সুস্থতার প্রথম ধাপ নিজেকে ভালোবাসা। তাই নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিন এবং প্রয়োজন হলে যথেষ্ট বিশ্রাম নিন। মানসিক চাপকে গুরুত্ব দেওয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি সচেতনতার পরিচয়। প্রতিদিন নিজের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজন হলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগ করুন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া মানেই জীবনের মান উন্নত করা। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হেলথ শর্টস আরও পড়ুন: সাইবেরিয়ান বিড়াল জেবু, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়া ও যত্ন প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার অভ্যাস গড়বেন যেভাবে  এসএকেওয়াই/