ফেনীতে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন দিন ধরে ফেনী জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সূর্যের দেখা মিলছে কম। এর সঙ্গে হিমেল বাতাস ও ঘনকুয়াশা শীতের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। রোরবার (২৮ ডিসেম্বর) ফেনীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। শীতের মধ্যে কাজ করতে বের হয়ে কাজ না পেয়ে ও শীতের মাঝে কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ শৈত্য প্রবাহ আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জানা গেছে, কত কয়েকদিন ধরে ফেনীতে টানা শৈত্য প্রবাহ চলছে। এতে করে হাঁড়কাপানো শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিপর্যস্ত অবস্থায় শীতে কষ্ট পাচ্ছে ভাসমান ও নিম্নবিত্তের মানুষ। অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বিগত সময়ে শৈত্য প্রবাহের এ মৌসুমে সরকারী-বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণের হিড়িক পড়লেও এবার মানবিক কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। পথচারী শহীদ মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে হঠাৎ করে এমন শীত পড়েছে, যে ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নানা রোগ। জ্বর-সর্দি ও কাশিসহ নানা ধরনের অসুখ হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখও বেড়েছে। শিক্ষার্থী মাহতাব অয়ন বলেন, সকালে কোচিং করতে যেতে হয়, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেশ শীত পড়েছে এতে করে আমাদের যেতে খুব কষ্ট হয়। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে সাধারণ পরিবহন। সদর উপজেলার কৃষিশ্রমিক তাহের ও খাদেম বলেন, তীব্র শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মাঠে থাকাটাও কষ্টকর। শহরের সহদেবপুর এলাকার আলফাতুন নেছার ভাষ্য, ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় ২ থেকে ৩টা কাঁথা-কম্বল দিয়েও শীত মানানো যাচ্ছে না। দিনমজুর মমিন হায়দার বলেন, আমরা প্রতিদিন মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে চলি। কিন্তু যে শীত পড়েছে বাড়ি থেকে বেরই হওয়া খুব কষ্টকর। কিন্তু বাড়ি থেকে বের না হয়ে উপায়ও নেই। কাজ না করলে ভাত তো খাওয়া হবে না। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, রোববার আবহাওয়া অফিস ফেনীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিন একইমাত্রা অথবা শৈত্য প্রবাহ আরও বাড়তে পারে। এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রোকন উদ্দিন জানান, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে থাকা শয্যার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও দৈনিক শীতজনিত অসুস্থতা নিয়ে গড়ে ২৫০ রোগী অবস্থান করছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর অতিরিক্ত চাপ দেখা যাচ্ছে। আবদুল্লাহ আল-মামুন/এনএইচআর/এমএস