মেসি-রোনালদো যদি এক দলে খেলত তবে কেমন হতো? মেসি ড্রিবল করে ডি-বক্সে নিখুঁত পাস বাড়ালেন আর রোনালদো সেই পাস ধরে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠালেন–এমন দৃশ্য কল্পনা করতেই পেটে প্রজাপতির নাচন টের পাচ্ছেন? এখন পর্যন্ত এই দৃশ্য বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা না জাগলেও গুঞ্জন ঠিকই দানা বাঁধছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নাকি লিওনেল মেসির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের দ্বৈরথ ভুলে ইন্টার মায়ামিতে খেলেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান—এমনটাই শোনা যাচ্ছে।এই শতাব্দীর প্রথম দশকে উত্থানের পর ফুটবল ইতিহাসের দুই মহাতারকা রোনালদো ও মেসি একে অপরের সঙ্গে তুলনার কেন্দ্রে থেকেছেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে ৪২–এ পা দিতে যাওয়া রোনালদো নাকি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন, আর সেই সঙ্গে আল নাসরের মহাতারকার পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) কি মেসির সঙ্গে রোনালদোর জুটি দেখা যাবে?রোনালদো ও মেসি দু’জনই তাদের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে আছেন। রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় রোনালদো বহুবারই বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে ফুটবলকে বিদায় জানাবেন তিনি। অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সী মেসি এ বিষয়ে তুলনামূলকভাবে একটু রহস্যময়।নভেম্বরে পিয়ার্স মরগানের শোয়ে অবসর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রোনালদো বলেন, ‘শিগগিরই। তবে আমি মনে করি আমি প্রস্তুত থাকব। এটা কঠিন হবে, অবশ্যই। কষ্ট হবে? হ্যাঁ। সম্ভবত কাঁদব, হ্যাঁ… আমি খোলামেলা মানুষ। খুব, খুব কঠিন হবে। কিন্তু পিয়ার্স (মরগান), আমি ২৫-২৬-২৭ বছর বয়স থেকেই আমার ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। তাই মনে করি এই চাপ সামলাতে পারব।’ আরও পড়ুন: লাতিন আমেরিকা সফরে যাচ্ছে মেসির মায়ামি, খেলবে ইকুয়েডরের ক্লাব বার্সেলোনার বিপক্ষেএর দুই মাস আগে মেসিও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আর্জেন্টিনা ২০২৬ বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখার চেষ্টা করলেও তিনি হয়তো সেখানে খেলবেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তখনই বলেছিলাম—আমার আরেকটি বিশ্বকাপ খেলা হবে বলে মনে হয় না। আমার বয়স অনুযায়ী সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা এখানে আছি এবং আমি উত্তেজিত। দিন দিন অনুভূতিগুলো উপভোগ করছি। আর পরিষ্কার কথা হলো, আজ এখানেই আমার শেষ ম্যাচ ছিল।’তবে মেসি ইন্টার মায়ামির সঙ্গে ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত নতুন চুক্তি করেছেন, যা থেকে বোঝা যায় তিনি এখনই অবসর নিতে চান না।রোনালদো ও মেসি দলগত ও ব্যক্তিগত; দুই পর্যায়েই সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য লড়াই করেছেন। নিজেদের সেরা সময়ে ব্যালন ডি’অরে পুরস্কারে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। দু’জনে মিলে জিতেছেন ১১টি। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও একে অপরের প্রতি সবসময়ই পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখেছেন।একবার রোনালদো সম্পর্কে মেসি বলেছিলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের দলের জন্য সেরা করার চেষ্টা করি। বাইরে কী বলা হচ্ছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। সে অসাধারণ মানের একজন খেলোয়াড়। সবাই জানে, আর সে কারণেই সে বিশ্বের সেরাদের একজন।’এর জবাবে রোনালদোও বলেছিলেন, ‘অবশ্যই লিও মেসির প্রতি আমার স্নেহ আছে। আমরা ১৫ বছর একসঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেছি। গালায় সে ইংরেজি ভালো বলতে না পারায় আমি তাকে অনুবাদ করে দিয়েছি—এটা মনে আছে। সে সবসময় আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে এবং সম্মান দেখিয়েছে।’চলতি বছরের শেষদিকে এসে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো' তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বোমা ফাটিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রোনালদো নাকি মেসির সঙ্গে তার দীর্ঘপ্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস এক পাশে সরিয়ে রেখে তার এজেন্টদের ‘ইন্টার মায়ামিতে তাকে অফার করার নির্দেশ’ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, আল-নাসরে যেখানে তিনি সপ্তাহে ৩০ লাখ পাউন্ডের বেশি বেতন পান, সেখানে তিনি নাকি অনেক কম পারিশ্রমিক নিতেও রাজি। প্রতিবেদনে পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়, কেন রোনালদো আল নাসরের সঙ্গে ২০২৭ পর্যন্ত চুক্তি থাকা সত্বেও মেসির সঙ্গে কখনো না খেলার ‘অপূর্ণ ইচ্ছা’ পূরণ করতে চান।প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়, সৌদি আরবে খেলতে খেলতে রোনালোদো ‘ক্লান্ত’, এমনকি তিনি নাকি ‘অপমানিত’। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে আল-নাসরের ম্যাচের চেয়ে উট দৌড় দেখতে বেশি দর্শক আসে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ত্বকবিশেষজ্ঞ ড. রোসাদো নাকি তাকে জানিয়েছেন, সৌদির প্রখর সূর্য তার ‘সংবেদনশীল’ ত্বকের জন্য ভালো নয়; মায়ামির আবহাওয়া বরং বেশি উপযোগী। তৃতীয়ত, রোনালদো নিজের শারীরিক ফিটনেস নিয়ে ‘অবসেসড’। তিনি জানেন, যদি তিনি ‘সাউথ বিচের উষ্ণ বালিতে তার সিক্স প্যাক নিয়ে হাঁটেন’, তবে তার ভক্তসংখ্যা ‘সমুদ্রের ঢেউয়ে ফেনার মতো বাড়বে’। আরও পড়ুন: বার্সা কেন গোল করতে নিষেধ করেছিল–রহস্য ফাঁস করলেন লেভানদোভস্কিএছাড়া, স্পোর্টিং সিপির এই সাবেক তারকা নাকি সিনেমায়ও ঝড় তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এমন গুঞ্জনও আছে যে তিনি টার্মিনেটর ফ্র্যাঞ্চাইজির পরবর্তী কিস্তিতে অভিনয় করতে পারেন। আর শেষ কথা, রোনালদো যেহেতু আরও রেকর্ড ভাঙতে বদ্ধপরিকর, তিনি জানেন—মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তার ব্যক্তিগত মাইলফলক কেড়ে নিতে পারেন। তাই মায়ামিতে একসঙ্গে খেললে তিনি নাকি ‘চুপিসারে’ মেসির ফ্রি-কিক ও পেনাল্টি নিয়ে নিতে পারবেন এবং আর্জেন্টাইন মহাতারকার ‘জাদুকরী অ্যাসিস্ট’ থেকে সুবিধা আদায় করবেন। উপরন্তু, মায়ামির সহ-মালিক ডেভিড বেকহামের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভালো।বিশ্বের নানা প্রান্তে এই প্রতিবেদন সাড়া জাগালেও এটি নিছক ‘বানোয়াট’ গল্প। আসল ঘটনা হলো স্পেনে ২৮ ডিসেম্বরকে এপ্রিল ফুলস ডে’র সমতুল্য মনে করা হয়। বোকা বানাতেই সংবাদমাধ্যমটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যে কারণে এমন প্রতিবেদনের ফাঁকির খবর স্প্যানিশরা ধরে ফেললেও বিদেশি পাঠকরা বিভ্রান্ত হয়েছে। এটি যে বানোয়াট তার বড় ইঙ্গিত হলো—প্রবন্ধটির লেখক রিকার্ডো টাবস, যিনি আসলে ‘মায়ামি ভাইস’ টিভি শোর এক কাল্পনিক চরিত্র। সুতরাং, রোনালদো ও মেসির একসঙ্গে খেলার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।উল্লেখ্য, মেসি ইন্টার মায়ামিকে তাদের ইতিহাসের প্রথম এমএলএস কাপ জিতিয়ে এখন ছুটি কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে রোনালদো সৌদি লিগে বছরের শেষটা ভালোভাবে শেষ করার দিকেই মনোযোগী। রোনালদোর দল লিগ টেবিলের শীর্ষে আছে এবং প্রথমবারের মতো এই পর্তুগিজের হাতে সৌদি লিগের শিরোপা উঠতে পারে।