বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তাদের ‘অঙ্গসংগঠন’ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘অপতৎপরতা’ নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকেও তার অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের অপতৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মতো জড়িতদের ‘ব্যক্তিগত’ মতামত বলে দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র প্রতিনিধি ও একটি বিশেষ দলের সদস্যদের উৎপাত ও এখতিয়ারবহির্ভূত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্ক উল্লেখ করেছে, ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির মৃত্যুর পর রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উদীচী ও ছায়ানটকে তছনছ করে দেওয়ার আহ্বান জানালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে জনপরিসরে অস্থিরতা ও মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আর আমরা এও লক্ষ্য করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত একজন শিবির নেতা সরাসরি হামলায় যুক্ত ছিলেন। দেখা যাচ্ছে, ১৮ ডিসেম্বর রাতে অগ্নিসন্ত্রাসের পেছনে অন্য আরও উসকানিদাতার পাশাপাশি রাকসু ও জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং ছাত্রশিবিরের নেতারাও একই ধরনের অপরাধ করেছেন।’ শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তরুণ রাজনীতিবিদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণ ও তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর হতাশাজনক ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী একের পর এক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, অথচ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে এবং দুটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে।’ রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানিমূলক তৎপরতার কথা তুলে ধরে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভদ্রতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থি শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে ঢুকলে ‘কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে’। উপরন্তু রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ঘোষণা করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক ক্লাসে আসতে পারবে না। তিনি রাজশাহীতে ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদেরও উসকানি দেন। বলাবাহুল্য, এসব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’ রাকসুর নেতাদের এ ধরনের আচরণ সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপর হামলা বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এর ‘স্পাইরাল ইফেক্ট’ সারা দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহেও পড়েছে বলেও তারা দাবি করেছেন। এএএইচ/এমএমকে/এমএস