হাদি হত্যা: ফয়সালের বোনের বাসায় ২১৯ কোটি টাকার চেক, নেপথ্যে কী?

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে গুলি করা শুটার ফয়সালের বোনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ২১৯ কোটি টাকার ১১টি ব্যাংকের চেক দিয়েছে ৬ ব্যক্তি ও ৭ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটি কোটি টাকার ইস্যু করা চেকের বেশিরভাগ হিসাবই দীর্ঘদিন ধরে অচল। হিসাবগুলোতে তেমন টাকাও নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এমন চেক ইস্যুর উদ্দেশ্য কী?ওসমান হাদিকে গুলির পরদিন র‌্যাবের হাতে আসা শুটার ফয়সালের বোনের আগারগাঁওয়ের বাসার পাশের বিল্ডিংয়ের একটি ফুটেজে দেখা যায়, ফয়সাল তার মাকে নিয়ে বাসার নিচে পরিত্যক্ত স্থানে কিছু একটা খুঁজছেন। পরে র‌্যাবের অভিযানে জানা যায়, পরিত্যক্ত সেই স্থানে বেশ কয়েকটি গুলি পাওয়া যায়। এই একই ধরনের গুলি দিয়ে হত্যা করা হয় হাদিকে। ওই ফ্ল্যাট থেকে আরও মেলে কোটি কোটি টাকার চেক। প্রিমিয়ার, আল আরাফা, প্রাইম, ন্যাশনাল, ঢাকা ব্যাংকসহ ১১টি ব্যাংকের ৩৮টি চেকের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য চেক ৩২টি। টাকার অংকে যা ২১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যার মধ্যে সর্বনিম্ন ৭ লাখ এবং সর্বোচ্চ ৯০ কোটির। চেকগুলোর তথ্য খুঁজতে ব্যাংকগুলোতে গিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ৩৫ কোটির ১০টি চেক প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুলশান শাখার। চেকের খবর শুনে আঁতকে ওঠে ব্যবস্থাপক জানান, কোনো তথ্য নেই তার কাছে। আরও পড়ুন: হাদি হত্যা: মূল আসামিদের ভারতে পালানো নিয়ে যে তথ্য দিলো ডিএমপি টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি ৯০ কোটি ৭ লাখ টাকার চেক প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখার। খোঁজ নিতে এ শাখায় গেলে ম্যানেজার গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। অগ্রণী ব্যাংক ওয়াসা শাখাতেও ফয়সালের কথা শুনে কেউ কথা বলতে রাজি নন। এরপরেই আছে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫০ কোটির চেক। ব্যবস্থাপক ক্যামেরার সামনে কথা বলেননি। তবে তিনি জানান, চেক ইস্যুকারী ম্যাম ইমপেক্স নামের প্রতিষ্ঠানের হিসাবটি অচল, সেখানে কোনো টাকা নেই। ৬টি চেক ইস্যু করা আল আরাফাহ ব্যাংকের মিরপুর শাখায় গেলে কর্মকর্তারা জানান, এই হিসাবও ডরমেন্ট বা অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফয়সালকে দেয়া ২১৮ কোটির মধ্যে ১৭২ কোটি টাকাই দিয়েছে রেনা শাহ ইন্টারন্যাশনাল, আবু ওমর ট্রেডিং করপোরেশন, ম্যাম ইমপেক্স, ড্রিমস ইনফিনিটি, চিশতি টেক্সসহ ৭ প্রতিষ্ঠান। শুটারকে ৯০ কোটি টাকা দেয়া ড্রিমস ইনফিনিটির ঠিকানা দেয়া বারিধারা ডিওএইচএসে। সেখান গিয়ে দেখা যায়, এই নামের প্রতিষ্ঠান কখনো ছিলই না। আরও পড়ুন: হাদি হত্যা: হামলাকারীর ২ সহযোগী ভারতে আটক বনানীর ম্যাম ইমপেক্স ফয়সালকে ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। সেখান গিয়েও হদিস মেলেনি প্রতিষ্ঠানটির। ফয়সালকে চেক ইস্যু করা আরেক প্রতিষ্ঠান এম আর ইন্টারন্যাশনালের বনানীর ঠিকানাতেও কিছু নেই। ইন্দিরা রোডের চিশতী টেক্সে গিয়ে যানা যায়, আরও ৪ বছর আগেই এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বরে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। ৭ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৬ ব্যক্তি ফয়সালকে দিয়েছে ৪৬ কোটি টাকা। ফয়সালের চেকের বিষয়ে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানে নেমে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ জানিয়েছেন, চেক ইস্যু করা সবার পরিচয় উন্মোচন করা হবে। তিনি বলেন, বাড়িতে অব্যবহৃত কিছু স্বাক্ষর করা চেক পেয়েছি, যেগুলো মূল্যমান প্রায় ২১৮ কোটি টাকা। এটা নিবিড়ভাবে সিআইডি তদন্ত করছে। এর পেছনে বড় কোনো গ্রুপ জড়িত আছে কিনা, তার কী মিশন ছিল-- এসব নিয়ে সিআইডি কাজ করছে।   এত বড় অংকের লেনদেনের পেছনে হাদি ছাড়া অন্য কোনো মিশন আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরও পড়ুন: হাদি হত্যাকাণ্ড: বিচারের দাবিতে আজও উত্তাল শাহবাগ ৩২ বছর বয়সি ওসমান হাদি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। এরপর পরিবারের ইচ্ছায় সেখান থেকে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সবশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় ওসমান হাদিকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।