জোটের মেরুকরণে তোলপাড়, শেষ মুহূর্তেও বিএনপিতে প্রার্থী নিয়ে হিসাবনিকাশ

দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় সোমবারের (২৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কিছু খবর নিচে তুলে ধরা হলো।জোটের মেরুকরণে তোলপাড়-দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সংবাদ এটি।এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ ২৯ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোট করার খবর আলোচনায় এসেছে, যা এনসিপির মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করেছে। অনেক নেতাই এই জোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং দলত্যাগ করেছেন।এনসিপির সদস্যরা জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শন ও অতীত আচরণ সমর্থন করেন না, তবে দলটি শেষ পর্যন্ত জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে যাচ্ছে। এই জোটে ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি কিছু অন্যান্য রাজনৈতিক দলও যুক্ত হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন দলও জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল রয়েছে। বিএনপি ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে, বাকি আসনগুলো শরিকদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে এই ধরনের মেরুকরণ অস্বাভাবিক নয়। জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখে কিছু নেতারা হতাশ। তবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং ক্ষমতায় আসা বড় দলগুলোর মূল উদ্দেশ্য, যেখানে আদর্শের চেয়ে প্রতীক এবং জয়ী হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। লড়াই হবে দুই জোটে- দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান সংবাদ এটি।এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার্যত দুটি বড় জোটের মধ্যে মূল লড়াই হতে যাচ্ছে। একদিকে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন মিত্র বলয়, যেখানে সরাসরি আসন-সমঝোতার মাধ্যমে ভোটে নামছে বিএনপিসহ ২৯টি দল। এর বাইরে আরও ১৬টি দল সরাসরি সমঝোতায় না থাকলেও একই বলয়ে থেকে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনে নিজ দলের প্রার্থী দিয়েছে এবং বাকি আসনগুলো মিত্রদের মধ্যে বণ্টন করেছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১০ দলের একটি জোট। আগে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আট দলের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই আসন-সমঝোতার ঘোষণা দেন। তিনি একে ‘দেশ গঠনের ও রাজনৈতিক জোট’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে জাতীয় ইস্যুতে একসঙ্গে আন্দোলনের আশাবাদ জানান। আরও পড়ুন: আজ কোথায় কী? তবে জামায়াতের সঙ্গে জোট করায় এনসিপির ভেতরে প্রকাশ্য বিরোধ ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েকজন নেতা ও প্রার্থী দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সংস্কার বাস্তবায়ন ও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে তারা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় গেছেন। জামায়াতের আমির জানান, ১০ দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রায় সব আসনের সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।শেষ মুহূর্তেও বিএনপিতে প্রার্থী নিয়ে হিসাবনিকাশ- দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সংবাদ এটি। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়ে বিএনপিতে প্রার্থী বদল ও পুনর্বিন্যাস চলছে। দলীয় কোন্দল, বিদ্রোহী প্রার্থীর তৎপরতা এবং তৃণমূলের চাপের কারণে ইতোমধ্যে ১৭টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে, তবে আরও কিছু আসনে রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার পর সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হলে বিএনপি জানায়, ঘোষিত তালিকা চূড়ান্ত নয় এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন হবে—এরই ধারাবাহিকতায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বয়স, অসুস্থতা, বিতর্ক, ঋণখেলাপি অভিযোগ এবং জোট সমঝোতা উল্লেখ করা হচ্ছে। কিছু আসনে নিজ দলীয় প্রার্থী সরিয়ে জোটসঙ্গীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১৭ আসনে আন্দালিভ রহমান পার্থের বদলে তারেক রহমানের প্রার্থী হওয়া, ভোলা-১ এ পার্থকে চূড়ান্ত করা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ এ মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম-৬ এ গিয়াস কাদেরের বদলে গোলাম আকবর খোন্দকার এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ এ আবুল কালামের মনোনয়ন। এছাড়া চট্টগ্রাম, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, যশোর, কিশোরগঞ্জ ও নড়াইলসহ বিভিন্ন আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষে নির্বাচন করবেন। বিএনপি এখন পর্যন্ত ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং বাকি ২৮ আসনে জোট শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। দলীয় সূত্র জানায়, বিদ্রোহ ও কোন্দল সামাল দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়নের চেষ্টা চলছে, তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।জামায়াত জোটে যোগ দিল এনসিপি ও এলডিপি- দৈনিক বনিক বার্তার প্রতিবেদন এটি।এই প্রতিবেদন বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা আট দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যুক্ত হয়েছে। এই জোটে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশও রয়েছে। গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত ও এনসিপি এই জোটের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে আসন বণ্টন এখনো চূড়ান্ত হয়নি; মনোনয়নপত্র দাখিলের পর আলোচনা করে তা চূড়ান্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, এটি ১০ দলের নির্বাচনী সমঝোতা, যার লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি সমতল মাঠ তৈরির আহ্বান জানান। জোটে আগে থেকেই থাকা আট দলের সঙ্গে নতুন করে এনসিপি ও এলডিপি যুক্ত হয়েছে। এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি কোনো আদর্শিক ঐক্য নয়, বরং পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের স্বার্থে একটি নির্বাচনী সমঝোতা। তিনি জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা রক্ষার জন্য বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থীদের বিষয়ে শিগগির ঘোষণা আসবে। তবে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনকে কেন্দ্র করে এনসিপিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা পদত্যাগ করেছেন, কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পদত্যাগ ব্যক্তিগত বিষয়। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, তিনি এই জোটের অংশ হচ্ছেন না।