আলু আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন বরগুনার কৃষকরা। জেলায় একে নেই হিমাগার, অন্যদিকে ঔষধের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে শঙ্কিত তারা। তাই প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে ঔষধ বিক্রি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জেলায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি তুলেছেন তারা।কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলু উৎপাদনের দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে তৃতীয় বরগুনা জেলা। এ জেলার পাথরঘাটায় সব থেকে বেশি আলু আবাদ করা হয়। চলতি বছর জেলায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যেই আবাদ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি। জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন।কৃষকরা বলছেন, চলতি বছর আলোর বীজের সংকট না থাকলেও বিক্রেতারা কীটনাশকের দাম বেশি দিচ্ছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি দামে কীটনাশক কিনতে গিয়ে আলু আবাদের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে শঙ্কিত তারা। অন্যদিকে জেলায় কোনো হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে পারেন না তারা। তাই তাৎক্ষণিকভাবে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা।এদিকে জেলায় হিমাগার থাকায় বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারেন না কৃষকরা। অন্যদিকে উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে না পারায় কম দামে বিক্রির পাশাপাশি পচেও যায় অনেক আলু।চলতি বছর জেলায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যেই আবাদ হয়েছে ৪৫০ জমিতে। কৃষকদের অভিযোগ, চাহিদা বেশি থাকায় ঔষধের দাম বেশি নিচ্ছেন কৃষকরা। এতে বেড়েছে খরচ। অন্যদিকে হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ নিয়ে শঙ্কিত তারা। তাই নির্ধারিত মূল্যে ঔষধ বিক্রির পাশাপাশি হিমাগার নির্মাণের দাবি তাদের।পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় যেসব ওষুধ সরবরাহকারী আছেন, তাদের থেকে বেশি দামে আমাদের ওষুধ কিনতে হয়। ঔষধের গায়ে দাম লেখা থাকে না। আমরা বাকিতে কিনি। এ সুযোগে বিক্রেতা বাকির খাতায় মনমতো দাম লিখে রাখে।’আরও পড়ুন: নলছিটিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেল ৪০০ বস্তা আলুএকই ইউনিয়নের বাদল মিয়া বলেন, ‘সংকটের কারণে সার পেতে দেরি হয়েছে। এজন্য আলু আবাদ করতেও দেরি হয়েছে। গতবছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তারপরও প্রায় ৭০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। হিমাগার না থাকায় আলু সংরক্ষণ করতে পারিনি। পরে পচে যাওয়ার ভয়ে আলু কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’স্থানীয় মোসলেম মুছুল্লি বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলায় সব থেকে বেশি আলু উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত আলু দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু এখানে কোনো হিমাগার না থাকার কারণে আমরা উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে পারি না। তাই প্রতিবাদ শত শত মণ আলু পচে যায়। আবার কম দামেও বিক্রি করে দিতে হয়। পাথরঘাটায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা হলে আলুর বীজ নিজেরা উৎপাদন করতে পারবো এবং আলু সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারবো।’এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘সংরক্ষণ করতে না পারায় আলু উৎপাদনের পর ভালো দাম পান না কৃষকরা। এ কারণে একটি হিমাগার নির্মাণের বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগে কথা বলেছি। তবে যদি স্থানীয় কোনো উদ্যোক্তা হিমাগার নির্মাণে এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রশাসনিক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি দফতরের মাধ্যমে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’আর কীটনাশক বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও বরগুনার পাথরঘাটায় সবথেকে বেশি আলু চাষ করা হয়। এ কারণে ওই এলাকায় ডিলারদেরকে বেশি পরিমাণ সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি ওই এলাকার কৃষকদের কোনো সার সংকট হবে না।’