তিনি শুধু রুপালি পর্দার নায়ক ছিলেন না, ছিলেন এক নিঃশ্বাসভরা অনুভূতি, এক নিঃশব্দ আকুলতা। রাজেশ খান্না প্রেমকে অভিনয় করে দেখাননি; বরং প্রেম কীভাবে চোখে নামে, কণ্ঠে ভাসে, নীরবতায় গেঁথে যায় তা হয়ে উঠেছিলেন নিজেই। তার সংলাপ ছিল কম, কিন্তু দৃষ্টি ছিল গভীর; হাসি ছিল মৃদু অথচ প্রভাব ছিল তীব্র। সিনেমার পর্দা পেরিয়ে সেই প্রেম ছড়িয়ে পড়েছিল দর্শকের জীবনে, চিঠিতে, গানে, অপেক্ষায়। তাই তিনি কেবল ভালোবাসার গল্প বলেননি; একটা সময়, একটা প্রজন্মের কাছে প্রেমের মানে হয়ে উঠেছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অমর নায়ক তিনি। আজ তার জন্মদিন। রাজেশ খান্না শুধু ক্যামেরার সামনে নয়, দর্শকের হৃদয়েও এক অনন্য জায়গা করে নিয়েছেন। যার অভিনয় এক সময় রোমান্সের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিল। ১৯৪২ সালের এই দিনে ভারতের অমৃতসরের এক পাঞ্জাব মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। তবে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখার আগে তিনি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ১৯৫০-এর দশকে মুম্বাইতে এসে শুরু করেন স্বপ্নপূরণের পথচলা, যা সহজ ছিল না। ১৯৬০-এর দশকে প্রথম নজর কাড়েন ‘আনা’ ছবির মাধ্যমে। কিন্তু সত্যিকারের খ্যাতি আসে ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রুমা’ বা ‘যুগম’ থেকে, যা দর্শক হৃদয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তার অভিনয়ের শক্তি ছিল অনুভূতির গভীরতা এবং চেহারার নীরব ভাষা। রাজেশ খান্নাকে বলা হয় ‘হৃদয়জয়ী নায়ক’। প্রেমের আবেগ, সংযত হাসি, চোখে অজানা অনুভূতির প্রকাশ এই সবই দর্শককে মুগ্ধ করতো। ‘আর্থার’, ‘অন্ধালো’ বা ‘বন্দি’ যে কোনো ছবিতেই তিনি রোমান্সকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। শুধু নায়ক নয়, চরিত্রের সঙ্গে দর্শককে মেলাতে পারার ক্ষমতা তাকে অনন্য করে তোলে। রাজেশ খান্নার ব্যক্তিগত জীবনও তার চলচ্চিত্র জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। চুপচাপ, সংযত আর এক রকমের শালীনতা এই সব বৈশিষ্ট্য তাকে শুধু একজন অভিনেতা নয়, এক আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। হিন্দি চলচ্চিত্রে এমন নায়ক বিরল, যিনি প্রেমের আবেগকে এত সাবলীলভাবে প্রকাশ করতে পারেন। চলচ্চিত্রকে তিনি শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম মনে করতেন না। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে তিনি এমন গভীরতা খুঁজতেন যা দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে। তাই রাজেশ খান্নার নাম আজও মনে পড়ে এক শিল্পী, যিনি প্রেম, আবেগ ও আবিষ্কারের সংমিশ্রণে ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগের প্রতীক হয়ে আছেন। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই মাত্র ৬৯ বছর বয়সে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান এই নায়ক। তিনি মরে গিয়েও রয়ে গেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। আজ শুধু তার জন্মদিন নয়, বরং ভারতীয় সিনেমার এক অধ্যায়কে স্মরণ করার দিন। রাজেশ খান্না দেখিয়েছেন অভিনয় মানে কেবল মুখের হাসি নয়, অনুভূতির গভীরতাকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলা। জেএস/