চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আ.লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমদকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাকে দলের প্রার্থী ঘোষণার পর রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।তাদের অভিযোগ, জসিমের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জসিম উদ্দিনের বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়েছে।জানা যায়, ২০২৪ সালে মে মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন তিনি।এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক মহসিন জিল্লুর করিম, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মিজানুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।আরও পড়ুন: আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ভোট চাইলেন বিএনপি নেতা হারুনএ ছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ ইখতিয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আল হেলাল, এম এ হাশেম, এজাজ আহমদ চৌধুরী, জাকির হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম।জসিমকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জসিম আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক। ওই সরকারের আমলের পুলিশের এক আইজিপির ঘনিষ্ঠ ও ব্যবসায়িক সহযোগী ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তার ডানে-বাঁয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সঙ্গে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। তার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।’আরও পড়ুন: বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন আ.লীগের সমর্থকরা, অভিযোগ জামায়াতেরনুরুল আনোয়ার চৌধুরী আরও বলেন, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি ছেড়ে যাওয়ার পর এলাকায় একটি কমিটিও ছিল না। এরপর নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করে বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন তারা। অথচ বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে জসিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাকে মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।জসিমকে বাদ দিয়ে দলের যে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি।মনোনয়নপ্রত্যাশী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জসিম আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। অথচ বিএনপি তখন নির্বাচন বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগের লোকজনই তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।’দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জসিমের মনোনয়ন বিবেচনারও অনুরোধ করেন এই বিএনপি নেতা।আরও পড়ুন: আ.লীগের হামলায় মাদারীপুর বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহতবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী মো. দুর্জয় আহম্মেদ (২৮) গত বছরের ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে মধ্যবাড্ডা ইউলুপের নিচে পোস্ট অফিস গলি মাথায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগের ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায়’ তাদের অনুসারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে বাদীর দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়।এ ছাড়া মাথায় পেছনেও গুরুতর আঘাত পান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনের নামে মামলাটি দায়ের করা হয়। সেখানে জসিম উদ্দিন আহমেদকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।এর আগে গত বছরের ১০ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের ঋণখেলাপির এক মামলায় চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।