ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে দেওয়া পোস্টে গণহারে রিপোর্টের কারণে ফেসবুক পেজ হারিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একইসঙ্গে ওসমান হাদীর ফেসবুক পেজও সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিলো বলে জানা গেছে। ‘বট রিপোর্টিং’-এর মাধ্যমে এসব পোস্ট ও পেজ রিমুভ করা হয়ে থাকতে পারে বলে মত দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক স্প্যামার গ্রুপের কারণেও এমনটি হতে পারে। এছাড়া গণহারে রিপোর্ট, কপিরাইট ক্লেইমের কারণেও এসব পেজ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। আর শিগগিরই এসব পেজ পুনরায় চালু হতে পারে। এরইমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে দেওয়া পোস্টে রিপোর্ট করে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ রিমুভ করে দেওয়া হয় বলে জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এখনও ওই পেজটি সক্রিয় নয়। গেল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) অপর এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ জানান, ওসমান হাদি ভাই সংশ্লিষ্ট সব পোস্ট, ভিডিওতে স্ট্রাইক এবং সংঘবদ্ধ রিপোর্ট করে আমার অফিসিয়াল পেইজটি (৩০ লাখের বেশি ফলোয়ার) রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে লিংক দিয়ে সংঘবদ্ধ রিপোর্ট করা হয়েছে। হাদি ভাইকে নিয়ে দেওয়া তিনটি ভিডিওতেই স্ট্রাইক করা হয়েছে বলেও জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা। এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চ থেকে অভিযোগ করা হয় ওসমান হাদির ফেসবুক পেজেও অনবরত রিপোর্ট করা হয়। সে কারণে পেজটি তারা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিলো। তবে বর্তমানে হাদির অফিসিয়াল পেজ সক্রিয় রয়েছে। আরও পড়ুনমেটাকে সরকারের চিঠি, উসকানিমূলক কনটেন্ট সরানোর অনুরোধইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দিলো মেটাফেসবুক পেজ হারালেন আসিফ মাহমুদহাদির মতো হিটলিস্টে আছে আরও অনেকে: আসিফ মাহমুদ জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষের পেজগুলোকে বাইরের কেউ একজন রিপোর্ট করেছে। আমরা বিটিআরসিকে বলছি, যেভাবে তারা পেজকে টেক ডাউন করার ব্যবস্থা নেয়, একইভাবে যেন পেজগুলো ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। এটি নিয়ে আমরা বিটিআরসির সঙ্গে কাজ করছি। আশা করি এ ধরনের পেজ ও কন্টেন্ট রিকভার হয়ে যাবে।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটাকে ফেইক বট রিপোর্টিং বলে। হাদি ভাইয়ের ফেসবুক পেজও চলে গিয়েছিলো। সবগুলো পেজ ও আইডি এখন ব্যাক হচ্ছে। হাদীর মেইন পেজ ডিজঅ্যাবল হয়ে গিয়েছিলো। এখন এনাবল হয়ে গেছে। সবই এনাবল হয়ে যাবে।’ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘আইসিটি বিভাগ এটি নিয়ে কাজ করেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। হাদি মারা গিয়েছে, সেটি জানানো হয়েছে। হাদির পেজটি এখন ব্যাক হয়েছে। এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাদের পেজ ইফেক্টেড হয়েছিলো; তাদের পেজ ও আইডি ফেরত আসবে।’ রাজনৈতিক স্প্যামার গ্রুপের কারণে এসব পেজ বন্ধ হয়ে থাকতে পারে এমন অভিমত দিয়েছেন ডিকোডস ল্যাব লিমিটেডের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আরিফ মঈনুদ্দীন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক ধরনের স্পামার আছে। কেউ হয়তো পূর্বপরিকল্পিতভাবে রিপোর্ট করেছে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ক্ষেত্রে যে রিপোর্টগুলো হয়েছে, সেগুলো পলিটিক্যাল স্প্যামার গ্রুপের কাজ।’ আরও পড়ুনমিথ্যায় ভরা ভিডিও গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠতে পারেশিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক করলো মাউশিওসমান হাদির বই নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের হুঁশিয়ারিইলিয়াস হোসেনের দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টও সরিয়ে দিলো মেটা ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি ভিডিওতে তারা বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট দেয়- এরমধ্যে বড়টি হচ্ছে কপিরাইট কন্টেন্ট। যে ভিডিওটি আপলোড করেছে সেই ভিডিওটি কার, সেটির কোনো কপিরাইট নেই, সেই ভিডিও আরও অনেকেই আপলোড করেছে। এ ধরনের ভিডিওতে তারা সহজেই কপিরাইট কন্টেন্ট হিসেবে রিপোর্ট করতে পারে। টার্গেট করে বেশ কিছু রিপোর্ট করে ফেসবুককে বোঝায় যে এটি কপিরাইট কন্টেন্ট। ফেসবুক তখন ওই কন্টেন্ট সরিয়ে দেয়। একটি দুটি কন্টেন্টে রিপোর্ট করলে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে, আবার পুরো পেজটিকে রিপোর্ট করলে আরেক ধরনের প্রতিক্রিয়া। বিভিন্ন ভিডিওতে রিপোর্ট করে পুরো পেইজটিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে বলে মনে করছি।’ সাধারণত তিনটি কারণে ফেসবুক পেজ বা কন্টেন্ট সরিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাধারণত তিনটি কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন পেজ, আইডি বা কন্টেন্ট সরিয়ে দেয়। আপনি এমন একটি ভিডিও বা টেক্সট পোস্ট করেছেন, সেটি ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আপত্তিকর। ফেসবুক যদি এআই বট বা ম্যানুয়ালি তা আইডেন্টিফাই করে, তবে তা সরিয়ে দেয়। যদি একটি পোস্ট দেওয়ার পরে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেটি নিয়ে নেগেটিভ পোস্ট দেয়, এই পোস্টটি ক্ষতিকর, আমি এটি দেখতে চাই না, এ ধরনের পোস্ট যেন আমার ফিডে আর না আসে, তখনও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেটিকে বিবেচনা করে ওই কন্টেন্ট বা আইডি বন্ধ করে দেয়। আর সরকার যদি মনে করে, এটি হার্মফুল কন্টেন্ট, আমি চাই না এটি থাকুক এবং ফেসবুককে জানায়। সরকারের দাবিটি যদি তারা যৌক্তিক মনে করে তখন ফেসবুক বা ইউটিউব ওই কন্টেন্ট সরিয়ে নেয়। সাধারণত এই তিনটি কারণে এমনটি হয়ে থাকে।’ ইএইচটি/এমএমএআর/এমএস