ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর যা বললেন জেলেনস্কি

ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মূল দুই জটের মধ্যে একটি কেটেছে বলে দাবি করেছেন জেলেনস্কি। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানে সমঝোতার ‘চূড়ান্ত’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন তারা। এখন শেষ ধাপের আলোচনা চলছে। শিগগিরই যুদ্ধ থামবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।স্থানীয় সময় রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তারা। এ সময় দুই নেতা শান্তি আলোচনার সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি বিষয় ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং দোনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে অগ্রগতির কথা জানান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, তার দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। কেবল দোনবাসের জট খোলা বাকি। সেটা হলেই যুদ্ধ পুরোপুরি থামানো যাবে। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে ৯৫ শতাংশ সমঝোতা সম্পূর্ণ। যেটুকু বাকি, তার জন্য ইউরোপের দেশগুলো বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁও এর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে কথাবার্তা এগিয়েছে। দোনবাস অঞ্চলের দখলদারি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাত অনেক পুরনো। ওই অঞ্চল ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে থাকলেও তা দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে মস্কো। যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে তাদের অন্যতম শর্ত এই দোনবাস থেকে জেলেনস্কির সেনা প্রত্যাখ্যান। এ বিষয়ে এখনও জট কাটেনি। আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’: ট্রাম্প বৈঠকের পর ট্রাম্প দাবি করেন, দোনবাস নিয়ে আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে। ট্রাম্পের কথায়, ‘এটার সমাধান এখনও হয়নি। কিন্তু আমরা সমাধানের কাছাকাছি রয়েছি। এটা খুব কঠিন একটা বিষয়।’ ফ্লোরিডার বৈঠকে যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাধান না হলেও কথা অনেকটাই এগিয়েছে বলে দাবি ট্রাম্পের। তিনি জানান, যুদ্ধ কবে থামবে, তা নিয়ে কোনো সময়সীমা এখনই তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট হবে, আদৌ সমঝোতা হবে কি না। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। দেখি কী হয়। যদি সমাধান না হয়, তা হলে এই যুদ্ধ আরও অনেক দিন ধরে চলবে।’ যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনে গিয়ে বৈঠক করবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প জানান, যদি ২৫০০০ মানুষের প্রাণ বাঁচে, তবে তিনি রাজি আছেন। জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করার ঠিক আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। জানান, পুতিন শান্তি স্থাপনের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপকে ‘খুব ভাল ও ফলপ্রসূ’ বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আরও পড়ুন: ইউক্রেন শান্তি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করলে হামলা আরও বাড়বে: পুতিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত ইউরি উশাকভ জানান, রোববার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ফোনালাপ হয়। আলোচনাকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং কার্যকর’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই নেতা স্থায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রস্তাবিত অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করেন দুই নেতা। পুতিন ও ট্রাম্পের মতে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি সংঘাত দীর্ঘায়িত করতে পারে এবং নতুন করে যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি তৈরি করবে। ফোনালাপে ট্রাম্পের প্রস্তাবে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে দুটি যৌথ ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনে সম্মত হন পুতিন। এছাড়া জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর আবারও কথা বলার বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।